বাংলাদেশে এখন ইউটিউব এবং ফেসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যম গুলোর জনপ্রিয়তা যেমন বাড়ছে। তেমনি অনেকের কাছে এগুলো আবার অর্থ আয়ের জন্য একটি মাধ্যম হিসেবে গড়ে উঠছে। অনেক কনটেন্ট ক্রেটার ইউটিউব এবং ফেসবুক থেকে মাসে লক্ষাধিক টাকা উপার্জন করছেন। পেশাদার ভাবে এসব প্ল্যাটফর্মের জন্য কনটেন্ট তৈরি করেছেন অনেক তরুণ। তাদের কনটেন্টও অসংখ্য মানুষ দেখছেন এবং শেয়ার করছেন । কিন্তু ইউটিউব এবং ফেসবুক থেকে কি উপায়ে আয় করা যায় । এমন প্রশ্ন আপনার মনে আসতেই পারে। জানতে হলে আমার আর্টিকেলটি মনযোগ সহকারে পড়ুন।
ইউটিউব এবং ফেইসবুক থেকে টাকা আয় করতে হলে প্রথমেই ইউটিউব এর ক্ষেত্রে আপনাকে একটি চ্যানেল তৈরি করতে হবে। জিমেইল ব্যবহার করে ইউটিউবে লগইন করে চ্যানেল তৈরি করা যায় । ফেসবুকের নিজস্ব একটি পেইজ তৈরি করতে হবে যেখানে আপনার কনটেন্ট গুলো প্রদর্শিত হবে। এসব করার জন্য আপনার বয়স অন্তত 18 বছর বা তার বেশি হতে হবে।
ইউটিউব বা ফেসবুকে কোনো ভিডিও আপলোড করলে সেখান থেকে টাকা আসবে না। সেজন্য আপনার একাউন্টে মনিটাইজেশন করতে হবে । এটা হচ্ছে ইউটিউব বা ফেসবুক থেকে অর্থ আয়ের এর জন্য তালিকাভুক্ত হওয়া। তবে চাইলেই এই মনিটাইজেশন করা যায় না।
ইউটিউব এর ক্ষেত্রে আপনাকে ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামে অংশ নিতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনার চ্যানেলের অন্তত 1000 সাবস্ক্রাইবার থাকতে হবে । সর্বশেষ 12 মাসের চ্যানেলের ভিডিও মিলে অন্তত 4000 ঘন্টা দেখার রেকর্ড থাকতে হবে। ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে একটি গুগল এডসেন্স একাউন্ট সংযুক্ত থাকতে হবে। এসব শর্ত পূরণ করা হলে আবেদন করার পর আপনি ইউটিউব থেকে বিজ্ঞাপন পেতে শুরু করবেন । ইউটিউব সিপিএম কস্ট মান মাইলস এবং সিপিসি বা কস্ট পার ক্লিক এর ভিত্তিতে অর্থ দেয়। এবং এগুলোর ভিত্তিতেই সিপিএম রেটও ওঠানামা করে।
মনিটাইজেশন পেতে হলে ফেসবুকের পাতায় আগে থেকেই বেশ কিছু ভিডিও আপলোড করতে হবে। আপনার পেইজটি মনিটাইজ করার উপযুক্ত কিনা সেটিও চেক করে দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। পেইজের ক্রিয়েটর স্টুডিও অপশন থেকে মনিটাইজেশন ট্যাবে ক্লিক করে দেখা যেতে পারে। যে সেটি আসলেই মনিটাইজ করা যাবে কিনা । পেজ মনিটাইজ করতে হলে ফেসবুকের নির্ধারিত নিয়ম কানুন অবশ্যই পূরণ করতে হবে। এসব নিয়মের মধ্যে রয়েছে, সব ভিডিও অন্তত তিন মিনিট লম্বা হতে হবে এবং ভিডিওর অন্তত এক মিনিট ধরে দেখার রেকর্ড থাকতে হবে । গত 60 দিন বা 2 মাসে যে ভিডিও গুলো রয়েছে সেগুলো মিলে ছয় লাখ মিনিট ভিউ থাকতে হবে। ফেইসবুক পাতার অন্তত 10 হাজার ফলোয়ার থাকতে হবে। সংশ্লিষ্ট দেশ এবং ভাষা ফেসবুকের জন্য হতে হবে অবশ্য বাংলাদেশ । এবং বাংলা ভাষা ফেসবুকে সমর্থন করে । পেইজে এমন কোন ছবি বা ভিডিও বা কনটেন্ট থাকতে পারবে না যেগুলো ফেইসবুক এর নীতিমালা ভঙ্গ করে বিশেষ করে। কনটেন্ট এমন হতে হবে যেন সবাই দেখতে পারে । এগুলো করা হলে আপনার ফেইসবুক পাতাটি এড জন্য উপযুক্ত হবে।
তখন আয়কর সনাক্তকরণ নম্বর TIN সংযুক্ত করে আবেদন করলে। ফেসবুকের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আপনার কনটেন্ট যাচাই-বাছাই করে দেখবে। বিশেষ করে দেখা হবে যে এগুলো আসলে । কোথাও থেকে কপি বা নকল করা হয়েছে। সব ঠিক থাকলে ফেসবুক মনিটাইজেশন খুলে দেবে। আপনি বিজ্ঞাপন পাবেন এবং সেটা পছন্দমত স্থানে বসাতে পারবেন। ফেসবুকে অনেক পাতা আছে লাখ লাখ লাইক’। কিন্তু তারা মনিটাইজেশন পাইনি আবার কোন পাতা হয়তো 30 হাজারের মত লাইক নিয়ে মনিটাইজেশন পেয়েছেন।
এটা আসলে নির্ভর করে যে, তারা ফেসবুকের শর্তগুলো কতটা ভালো ভাবে পূরণ করতে পারছে । এখানে উল্লেখ্য যে ফেসবুকে কোন ভিডিও থেকে আয় করতে হলে । সেটি অবশ্যই কোন পেইজ থেকে পাবলিশ করতে হবে । প্রোফাইল থেকে পাবলিশ করা হলে সেই ভিডিও মনিটাইজেশনের জন্য গন্য হবেনা।
বিজ্ঞাপন পাওয়া না পাওয়ার ক্ষেত্রে চ্যানেল বা পেইজের নিজেদের করার কিছুই নেই। কনটেন্ট এর ধরন সেটা দেখার প্রবণতা ইত্যাদি বিচার করে ইউটিউবার ফেসবুক সংক্রিয়ভাবে বিজ্ঞাপনগুলো দেবে । প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বিজ্ঞাপন ইউটিউব কে দেয় ইউটিউব আবার যেসব পণ্যের সম্ভাব্য বাজার বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট ভিডিওতে বিজ্ঞাপন সরবরাহ করে।
চ্যানেলের মোট কতজন সাবস্ক্রাইবার রয়েছেন সেটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। যদি তারা চ্যানেলটির নিয়মিত না দেখেন । কারন চ্যানেলের আয় নির্ভর করে বিজ্ঞাপনের ওপর চ্যানেলের ভিউ যত বাড়বে চ্যানেলটি ইউটিউব থেকে ততবেশি বিজ্ঞাপন পেতে শুরু করবে, আয়ও ততো বাড়বে। ইউটিউব এর নিয়ম অনুযায়ী 5 মিনিটের কম ভিডিওতে যে পরিমাণ অর্থ আসে। 8 মিনিটের বড় ভিডিওতে তার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ অর্থ পাওয়া যায়। ফেসবুকেও তিন মিনিটের বড় ভিডিও গুলোই বেশি অর্থ আয় করা যায়। এক মিনিটের ভিডিও তে বিজ্ঞাপন পাওয়া যায় তবে তার অর্থমূল্য কম । একই ভিডিও একইসঙ্গে ফেইসবুক এবং ইউটিউব এ শেয়ার করা যায় । সাধারণত সব ইউটিউবার এটা করে থাকেন। সেখানে মানুষ কতটা দেখছে কতক্ষণ ধরে দেখছে এটির উপরে বিজ্ঞাপন বাড়ে বা কমে ।
ফেসবুকে নিজের পাতায়. বুস্টিং করা যায় । বিভিন্ন গ্রুপে শেয়ার এর মাধ্যমে লাইক বা জনপ্রিয়তা বাড়ানো যায়। এভাবে যত বেশি মানুষ ভিডিও দেখবে আপনার ততো আয়ও বাড়বে।
ইউটিউব ফেসবুক থেকে অর্থ বের করাকে বলে পেআউট। ফেসবুকের মনিটাইজেশন চালু করার সময় ব্যাংক হিসাবের তথ্য দিতে হয়। একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ভিউ হওয়ার পর । প্রতি মাসে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওই অ্যাকাউন্টে অর্থ জমা হয় । এটা পেপালের মাধ্যমে উত্তোলন করা যায়। তবে ইউটিউব এর ক্ষেত্রে অন্তত 100 ডলার হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা হবে। 100 ডলারের বেশি হলে সেটা গুগল এডসেন্স ব্যবহার করে নিজের ব্যাংক হিসেবে হস্তান্তর করা যায়।
ইউটিউবার ফেসবুক যে মাধ্যমের জন্যই কনটেন্ট তৈরি করা হোক না কেন? সেগুলোতে অবশ্যই কপিরাইট এর নিয়ম মানতে হবে । কারণ কপিরাইট নিয়ে প্রশ্ন উঠলে পুরো চ্যানেলটি বাতিল হয়ে যেতে পারে । বাংলাদেশে এখনো ইউটিউবে বা ফেইসবুক এ কনটেন্ট তৈরির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা বা নিয়মকানুন নেই । আইন বিরোধী কিছু করা হলে সেটার ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের আওতায় পড়তে পারে।