1. mdasattarsarker07@gmail.com : shimulvisa@gmail.com :
বদ নজর কি? বদ নজরের প্রভাব ও ইসলামিক পন্থায় চিকিৎসা | Tips2fit
pikrepo 1
  • ৫১৯
বদ নজর কি? বদ নজরের প্রভাব ও ইসলামিক পন্থায় চিকিৎসা

সহিহ হাদিসের দ্বারা বদনজর প্রমাণিত: (বদনজর – পর্ব: ০১)

ইমাম মুসলিম রহ. স্বীয় কিতাব সহিহ গ্রন্থে হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আব্বা রাযি. থেকে বর্ণনা করেন, রাসুল বলেন,

الْعَيْنُ حَقٌّ وَلَوْ كَانَ شَيْءٍ سَابَقَ الْقَدَرَ، لَسَبَقَتْهُ الْعَيْنُ.

নজর লাগা সত্য । যদি কোনো জিনিস ভাগ্যকে অতিক্রম করতো তাহলে নজর তাকে অতিক্রম করে যেতো।

ইমাম মুসলিম সহিহ গ্রন্থে আরেকটি হাদিস হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) বলেন,

أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وسلم رخّص في الرقية من الحمى وَالْعَيْنِ وَالنَّمْلَةِ.

রাসুল (সা.) জ্বর, বদনজর এবং ফোঁড়ার কারণে ঝাড়-ফুঁকের অনুমতি দিয়েছেন।

সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম গ্রন্থে হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসুল বলেন, নজর লাগার ব্যাপারটি সত্য।

বদনজর প্রতিহত করার ক্ষেত্রে করণীয়

সুনানে আবু দাউদ গ্রন্থে হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

বদনজরকারীকে ওজু করার আদেশ করা হতো এবং যার উপর নজর লেগেছে তাকে সেই পানি দিয়ে গোসল করতে বলা হতো ।

সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম গ্রন্থদ্বয়ে উম্মুল মুমিনিন হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

( أَمَرَنِي النَّبِيُّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَوْ أَمَرَ أَنْ نَسْتَرْقِي مِنَ الْعَيْنِ.)

উম্মুল মুমিনিন হযরত আয়েশা রাযি. বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) তিনি আমাদেরকে অথবা

ঝাড়-ফুঁক করার হুকুম দিয়েছেন।

হযরত আসমা বিনতে উমাইস রাযি.-এর সূত্রে বর্ণনা। এমন, তিনি বলেন,

يَا رَسُول الله! إِنَّ بَنِي جَعْفَرٍ تُصِيبُهُمُ الْعَيْنُ أَفَأَسْتَرْقِي لَهُمْ؟ فَقَالَ : نعم قالوا شَيْءٌ يَسْبِقُ الْقَضَاءَ لَسَبَقَتْهُ الْعَيْنُ.

হে আল্লাহর রাসুল, জাফর গোত্রের লোকদের বদনজর লাগার রোগ হয়েছে। আমি কি তাদের জন্য ঝাড়-ফুঁক করবো? রাসুল বললেন, হ্যাঁ। যদি আনো জিনিস ভাগ্যকে অতিক্রম করে, তাহলে বদনজর ভাগ্যকে অতিক্রম করবে। ঐ তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান ও সহিহ।

বদনজরকারী বিশেষ অঙ্গ ধৌত করে পানি ব্যবহার

ইমাম মালেক রহ. হযরত সাহল বিন হুনাইফ রাযি.-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,

رَأَى عَامِرُ بْنُ رَبِيعَةَ سَهْلَ بْنَ حُنَيْفٍ يَغْتَسِلُ، فَقَالَ : وَالله مَا رَأَيْتُ كَالْيَوْمِ وَلَا جِلْدَ مُخَبَّأَةٍ قَالَ : فَلْبِطَ سهل، فَأَتَى رَسُولُ الله صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عامر، فَتَغَيَّظَ عَلَيْهِ وَقَالَ : «عَلَامَ يَقْتُلُ أَحَدُكُمْ أَخَاهُ أَلَا بَرَّكْتَ اغْتَسِلُ لَهُ، فَسَلَ له عامر وَجْهَهُ وَيَدَيْهِ وَمِرْفَقَيْهِ وَرُكْبَتَيْهِ، وَأَطْرَافَ رِجْلَيْهِ، وَدَاخِلَهُ إِزَارِه في قَدَح، ثُمَّ صَبَّ عَلَيْهِ، فَرَاحَ مَعَ النَّاسِ.

হযরত আমির বিন রবিয়াহ রাযি. হযরত সাহাল বিন হানিফ রাযি.-কে গোসল করতে দেখে বললেন, আল্লাহর কসম, আজকের মতো মূল্যবান দিন এবং উজ্জ্বল চামড়া আমি আর কখনো দেখিনি! এর মধ্যেই সাহাল দাপড়াতে শুরু করলেন। হযরত আমির রাযি.-এর কাছে রাসুল (সা.) তাশরিফ আনলেন । হযরত সাহাল রাযি.-এর এই অবস্থা দেখে তার উপর রাগান্বিত হয়ে বললেন, কিসের ভিত্তিতে তোমরা নিজে নিজের ভাইয়ের জান নিয়ে নাও? তুমি বরকত থেকে বঞ্চিত হও।

চেহারা, দুই হাত, দুই কনুই, দুই গোড়ালি, পায়ের জোড়া এবং লজ্জা একটি পাত্রে ধৌত করেন এবং পাত্রের পানি হযরত সাহাল রাযি.-এর উপর ঢালেন। তখন সাহাল রাযি. ভালো হয়ে যান এবং শান্তির নিঃশ্বাস নেন।

 

সুস্থতার জন্য বদনজরকারীর অজুর পানি ব্যবহার

ইমাম মালেক রহ. একই হাদিস হযরত আবু উমামাহ ইবনু সাহাল রাখি, থেকে বর্ণনা করেছেন।

এই হাদিসে তিনি উল্লেখ করেছেন, রাসুল (সা.) বলেন,

إِنَّ الْعَيْنَ حَقٌّ، تَوَضَّأُ لَهُ، فَتَوَضَّأَ لَهُ.

বদনজরের ব্যাপারটি সত্য। তুমি তার জন্য ওজু করো। হযরত আমির রাখি, ওজু করলেন।

সুস্থতার জন্য বদনজরকারীর গোসলের পানি ব্যবহার

ইমাম আবু বকর আবদুর রাজ্জাক ইবনু হাম্মাম রহ. মারফু সূত্রে হযরত তাউস রহ. থেকে বর্ণনা করেন, বদনজর লাগার ব্যাপারটি সত্য। যদি ভাগ্যের চেয়ে শক্তিশালী কিছু থাকে, তাহলে বদনজরই শক্তিশালী হবে। যদি তোমাদের মধ্যে কাউকে গোসল করতে বলা হয়, তাহলে তাকে গোসল করিয়ে দাও। এই হাদিসটি অবিচ্ছিন্ন সূত্রে সহিহ।

ইমাম আবু বকর মুহাম্মাদ ইবনু মুসলিম যুহরি রহ. বলেছেন, বদনজরকারীকে এক পেয়ালা পানি উপস্থিত করতে বলা হবে। ওই পানির মধ্যে তার দুই হাত প্রবেশ করাবে এবং তাকে কুলি করানো হবে। কুলি করা পানি পাত্রে ঢালতে বলা হবে। একইভাবে তার চেহারা পাত্রের মধ্যে ধোয়ানো হবে। তারপর তার বাম হাতকে পাত্রে প্রবেশ করানো হবে এবং পানি তার ডান হাঁটুতে ঢালা হবে। অতঃপর ডান হাত প্রবেশ করানো হবে এবং পানি তার বাম হাঁটুতে ঢালা হবে। তারপর তার লজ্জাস্থান ধোয়া হবে। আর পাত্র মাটিতে রাখা হবে না। অতঃপর যার উপর, নজর লেগেছে তার পেছনে দিক থেকে মাথায় একবারে পানি ঢালা হবে।

১. মুয়াত্তা মালিক, হাদিস : ১৮৭৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৫৯৮০। ২. মুয়াত্তা মালিক, হাদিস : ১৮৭৭, সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৬১০৫, শাইখ আরনাউত রহ. সনদের বর্ণনাকারীদের বিশ্বস্ত বলেছেন, আল-মুয়জামুল কাবির, হাদিস : ৫৫৮০, আল-মুসতাদরাক, ইমাম হাকিম, হাদিস : ৫৭৪২, ইমাম হাকিম ও ইমাম যাহাবি রহ. হাদিসটি সহিহ বলেছেন।

বদনজরের প্রকারভেদ

বদনজরের প্রকারভেদ দুই প্রকার।

এক. মানুষের বদ নজর।

দুই. জিনদের বদ নজর।

উম্মুল মুনিনিন হযরত উম্মু সালামাহ রাযি. থেকে বিশুদ্ধ বদনজর সূত্রে বর্ণিত আছে, أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى فِي بَيْتِهَا جَارِيَةً فِي وَجْهِهَا سَفْعَةٌ اسْتَرْقُوا لَهَا، فَإِنَّ بِهَا النَّظْرَةَ»

রাসুল (সা.) তাঁর ঘরে এক দাসীকে দেখলেন যার চেহারায় কালো দাগ ছিল। রাসুল বললেন, তাকে ঝাড়-ফুঁক করো। কারণ, তার উপর বদনজর লেগেছে

ইমাম আবু মুহাম্মাদ হুসাইন ইবনু মাসউদ আল-ফার্রা রহ. বলেন যে, “….. শব্দটি শয়তান জিনের বদনজর বুঝানোর জন্য ব্যবহার হয়। তিনি বলেন, তার উপর যে বদ নজর লেগেছিল সেটি জিনদের বদনজর ছিল। এটি বর্শার বিষের চেয়ে বেশি প্রভাব সৃষ্টিকারী ।

বদনজর মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়

হযরত জাবির ইবনু আবদুল্লাহ রাযি. থেকে মারফু সূত্রে বর্ণিত আছে, রাসুল * বলেন, বদনজর মানুষকে কবর পর্যন্ত এবং উটকে ডেগ পর্যন্ত পৌঁছে দেয়।° অর্থাৎ নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায় । হযরত আবু সাঈদ খুদরি রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসুল শয়তান এবং মানুষের বদনজর থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন।

বদনজর অস্বীকারকারী ভ্রান্ত দল

বদনজরের ব্যাপারে একটি অবিবেচক ও নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক দলের দাবি হলো, বদনজর একটি কল্পনাপ্রসূত বিষয়। এটার কোনো বাস্তবতা নেই। এসব কুৎসিত। আত্মা ও প্রাণের বিদ্যা থেকে বহুদূর। রুহানি লোক দৃষ্টিশক্তিহীন ও বিবেকহীন মূর্খ। তাদের আচরণ অস্বাভাবিক মূর্খতা এবং বৈশিষ্ট্যাবলী এবং তার প্রভাব থেকে একেবারেই বিচ্ছিন্ন। দুনিয়ায় সমস্ত মাজহাবের জ্ঞানসম্পন্ন ও অভিজ্ঞ লোক বদনজরের বাস্তবতার ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন। কেউ এটিকে অস্বীকার বা বাতিল বলেননি। যদিও তারা ও নফসানী বদনজরের কারণ এবং প্রভাবের ধরনের ব্যাপারে মতানৈক্য করেছেন। আরেকটি ভ্রান্ত দলের দাবি হলো, বদনজরকারী যখন নিজের দৃষ্টিকে পুরোপুরিভাবে প্রভাবিত করে ফেলে, তখন চোখ থেকে বিষাক্ত বস্তু ছুড়ে মারে যা বদনজরে প্রভাবিত ব্যক্তি পর্যন্ত পৌছায়। ফলে তখন তার কষ্ট অনুভূত হতে থাকে। এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ বলেন, এটি একটি অনস্বীকার্য সত্য। যেভাবে সাপের বিষের প্রভাব মানুষের শরীরে ছড়িয়ে যায়, সেভাবে বদনজরের বিষয়টিও মানুষকে আক্রান্ত করে। কিছু কিছু সাপ এমন আছে, যার দৃষ্টির প্রভাবে মানুষ আক্রান্ত হয় এবং মৃত্যুবরণ করে। অবিকল এ রকমই বদনজরকারী ব্যক্তি অন্য আরেক দলের বক্তব্য হলো, কিছু কিছু লোকের এমন অদৃশ্য শক্তি থাকে, যা আক্রান্ত ব্যক্তির দিকে স্থানান্তর হয়ে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে, যার মাধ্যমে তার ক্ষতি হয় ।

বস্তুর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও উপকার-অপকারকে অস্বীকার

তৃতীয় আরেকটি দলের মতামত হলো, আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিকুলের সাথে নিজ ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে থাকেন। তিনি যাকে কষ্ট দিতে চান তাকে কষ্ট। দেন। তাই অযথা বদনজরকারীর দৃষ্টির উপর এই অপবাদ চাপিয়ে দেওয়ার কোনো মানে হয় না। এ মতামতটি বিশেষ একশ্রেণির মতবাদ। তারা পৃথিবীতে কোনোপ্রকার মাধ্যম, শক্তি ও প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বাস করে না। এ দলটি কারণ দর্শানো, প্রতিক্রিয়া, নির্ভরতা ও মাধ্যম ব্যবহার প্রভৃতি বিষয়কে অস্বীকার করে পুরো দুনিয়ায় জ্ঞানী লোকদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এটি একটি অনস্বীকার্য সত্য যে, আল্লাহ তাআলা শরীর এবং রুহের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের আচরণ এবং বিভিন্ন ধরনের শক্তি দিয়েছেন। তার মধ্যে অসংখ্য কার্যকরী অবস্থা ও গুণাগুণ দান করেছেন। দুনিয়াতে কোনো জ্ঞানী লোক শরীরের রুহের প্রভাবকে অস্বীকার করতে পারে না। এটি একটি অনুভূত ও জিনিস। আপনি দিন-রাত প্রত্যক্ষ করেন যে, কোনো ব্যক্তি রাগ হলে বা লজ্জা পেলে চেহারা লাল হয়ে যায় এবং ভয়ানক জিনিস দেখলে চেহারা বা বিবর্ণ হয়ে যায়। একই বিষয় মানুষ বদনজরে আক্রান্ত হওয়া রুগীর মধ্যে প্রত্যক্ষ করেছেন। এগুলোর সবই কেবল রুহের প্রভাবের ফলাফল। তাহলে এখানে দৃষ্টির কী দোষ? বরং কেবল রুহের প্রভাবে প্রভাবিত হয়। রাহার আচরণ শক্তি, অবস্থা ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বিভিন্নরকম হয়ে থাকে। সুতরাং হিংসাকারী ব্যক্তির রুহ থেকে হিংসাকৃত ব্যক্তির ক্ষতি হয়। এই জন্য আল্লাহ তাআলা স্বীয় রাসুল -কে আদেশ করেছেন, তিনি যেন হিংসাকারীর অনিষ্টতা থেকে পরিত্রাণ চান ।

 বদনজরকারী ব্যক্তিকে হিংসুকের সাথে তুলনা

হিংসার শিকার ব্যক্তির মাঝে দুঃখ-কষ্ট প্রভাব সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে হিংসাকারীর নজরের প্রভাব এমন এক সত্য, যা কেউ অস্বীকার করতে পারে না। এই সত্যকে একমাত্র সেই অস্বীকার করতে পারে, যে মনুষত্বের পোশাকবিহীন। এটাই বদনজরের বাস্তবতা। হিংসুকের অন্তর খবিশ ও নিচু স্বভাবের হয়ে থাকে এবং যখন সে হিংসার শিকার ব্যক্তির বিপরীতে আসে তখন তার মধ্যে ওই খারাপ অবস্থার কারণে প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

বদনজরকারীকে সাপের সাথে তুলনা

বদনজরকারীর উদাহরণ হিসেবে সবচেয়ে উপযুক্ত হলো সাপ। কারণ, সাপের মধ্যে শক্তিশালী বিষাক্ত পদার্থ লুক্কায়িত থাকে। যখন সে শত্রুর বিপক্ষে দাড়ায়, তখন এটার শক্তি কঠিন রাগে পরিণত হয়ে যায় এবং একজন ক্ষতিকারী ব্যক্তি খারাপ অবস্থায় ওই শক্তি পুরোপুরিভাবে প্রয়োগ করে। কখনো কখনো এই শক্তি এতো বেড়ে যায় যে, এটার প্রভাবে বাচ্চা প্রসব হয়ে যায়। আবার কখনো কখনো দৃষ্টি শক্তি নষ্ট হয়ে যায়। যেমনটা রাসুল লেজকাটা সাপ এবং ফণাধর সাপ-এর ব্যাপারে বলেছেন। তিনি বলেন, এই মুটি সাপ দৃষ্টি শক্তিকে নষ্ট করে এবং গর্ভপাত করে দেয়। যাদের বদনজর করার অভ্যাস রয়েছে তাদের কোনোপ্রকার স্পর্শ ছাড়াই শুধু দেখার মাধ্যমেই যে-কারও উপর প্রভাব ফেলতে পারে। স্পর্শ করলে তো কথাই নেই। এইসব নফসে অস্বাভাবিক খারাবি থাকে। এর প্রভাব সৃষ্টিকারী

[১. সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩২৯৭, ৩৩১০, ৪০১৬ ও সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২২৩৩। ]

অবস্থা ও মন্দপ্রভাব শরীর পর্যন্ত পৌঁছানোর স্পর্শ করতে হয় না। যেমন ,

কিছু লোক এমন রয়েছে, যারা বিশ্বাস করে তবিয়ত এবং শরিয়ত উভয়টাতেই অবস্থা ও মন্দপ্রভাব শরীর পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য স্পর্শ করতে হয় না। যেমন সামনে আসার দ্বারা, দৃষ্টি পড়ার দ্বারা, রুহের কার্যকারিতার দিকে আকর্ষিত কোনোধরনের শক্তি নেই। বরং কখনো নফসের প্রভাব মিলিত হওয়ার দ্বারা, থাকে। বদনজরকারীর প্রভাব শুধু দেখার উপরই ক্ষ্যান্ত নয়। বরং অনেক হওয়ার দ্বারা, ঝাড়-ফুঁক, দুআ-তাবিজ, বিভ্রম ও কল্পনার উপর ভিত্তি করে হয়ে  বদনজরকারী অন্ধ হয়ে থাকেন। যারা না দেখেই দৃষ্টিপাত করেন এবং যার উপর বদনজর করতে চান, তার উপর এর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। আল্লাহ তাআলা স্বীয় রাসুল (সা.) কে সম্বোধন করে বলেন,

وَإِنْ يَكادُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَيُزْلِقُونَكَ بِأَبْصارِهِمْ لَمَّا سَمِعُوا الذِّكْرَ.

যদি কাফেররা পারে, তাহলে এই চেষ্টা করুক যে তাদের দৃষ্টি দ্বারা আপনাকে প্রভাবিত করবে, যখন তারা কুরআন শুনে।`

অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন,

لْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ. مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ. وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ. وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذا حَسَدَ.

হে নবি! আপনি বলুন যে, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি প্রভাতের পালনকর্তার নিকট । তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্টতা থেকে । অন্ধকার রাতের অনিষ্টতা থেকে, যখন তা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয় এবং ওইসব নারীর অনিষ্টতা থেকে যারা গ্রন্থিতে ফুঁৎকার দেয় । হিংসুকের অনিষ্টতা থেকে যখন সে হিংসা করে।

কথাবার্তায় বদনজরের প্রভাব

প্রত্যেক বদনজরকারী ব্যক্তিই হিংসুক হয়। কিন্তু সব হিংসুক বদনজরকারী হয় না। যেহেতু এটি একটি প্রমাণিত বিষয়। তাই বলা যেতেই পারে, হিংসুকের দ্বারা খারাপ দৃষ্টিপাত বেশি হয়। তাই কুদৃষ্টি থেকে যেমন আশ্রয় প্রার্থনা করা হয়, তেমনি বদনজর থেকেও আশ্রয় প্রার্থনা করা উচিত। কেননা বদনজর এক প্রকার তীর, যা হিংসুক ও নজরকারীর নফস থেকে বের হয়ে হিংসার শিকার ও নজরকৃত ব্যক্তির দিকে পরিচালিত হয়। কখনো লক্ষ্যবস্তু পর্যন্ত পৌঁছতে পারে, আবার কখনো ভুল হয়ে যায়। এ কারণে, বদনজরের এই তীর যদি এমন ব্যক্তির কাছে পৌঁছে যে একবারে সামনে, লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার

১. সুরা ক্বলাম, আয়াত : ৫১।

২. সুরা ফালাক, আয়াত : ১-৫ ।

বদনজরকারী ব্যক্তিকে শাস্তি প্রয়োগ

বদনজরের সম্পর্ক রুহ এবং নফসের সাথে হয়ে থাকে। আর হিংসার সম্পর্ক শরীরের সাথে হয়ে থাকে। বদ নজরের প্রকৃত বিশ্লেষণ হলো, বদনজরকারীর কাছে যখন কোনো জিনিস ভালো লাগে তখন সে তার নফসের অবস্থাকে তার পেছনে লাগিয়ে নিজের নজরের বিষ তীরের মতো নজরকৃত ব্যক্তির দিকে পৌছাতে চেষ্টা করে। কখনো কখনো মানুষ নিজের উপরই নজর লাগিয়ে দেয়। আবার কখনো অনিচ্ছায় বদনজর লেগে যায়। বরং স্বভাব ও আচরণবশত এমনটা হয়ে যায়। মানুষের পক্ষ থেকে বদনজর সবচেয়ে মারাত্মক। এই জন্য আমাদের মাজহাব ও অন্যান্য ইসলামি স্কলারগণ এই মতামত দিয়েছেন যে, যদি কোনো ব্যক্তিকে এমন প্রকৃতির মনে হয়, তখন বিচারকের উচিত তাকে জেলে বন্দি করে রাখা এবং জেলখানার ভেতরে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে যাতে তার মৃত্যু হয়ে যায় । এই অভিমতটিই অকাট্যতার দিকে থেকে সর্বাধিক উপযুক্ত মনে হয় ।

Related Post:

Please Share This Post in Your Social Media