1. mdasattarsarker07@gmail.com : shimulvisa@gmail.com :
মানব দেহের জন্য খাদ্যদ্রব্যের পুষ্টিকর উপাদান সমূহ | Tips2fit
pngwing.com 4
  • ২৩৪
মানব দেহের জন্য খাদ্যদ্রব্যের পুষ্টিকর উপাদান সমূহ
25 / 100

সবাই কেমন আছেন ? আজকে আমি আপনাদের সামনে যে আর্টিকেল নিয়ে আসলাম সেটি হল মানব দেহের জন্য কি কি পুষ্টি উপাদান প্রয়োজনীয়। এইসকল পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব আজকের এই আর্টিকেলে। তো চলুন আমরা প্রথম জেনেনি খাদ্য আমাদের দেহের জন্য কেন প্রয়োজন ।
খাবার কীভাবে শরীর রক্ষার কাজে লাগে। এখানে একটা কথা জানিয়ে রাখি যে, দেহের সব কোষ কিন্তু একই রকম উপাদানে তৈরি নয়। বিশেষ কোষের গঠন ও চরিত্র ভিন্ন ভিন্ন রকমের। ফলে এসব কোষের প্রয়োজন হয় বিভিন্ন রকম খাদ্যসার। সে জন্য প্রতিদিনের খাবারের সাথে সবরকম খাদ্যগুণ যাতে পাওয়া যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে, না হলে দেহসৌষ্ঠব বজায় রাখা যাবে। না। এ ছাড়া খাদ্যগুণ নেই বা নষ্ট হয়ে গেছে এমন খাবার খেয়ে খিদে মেটানো। গেলেও কিন্তু সুন্দর লাবণ্যময় স্বাস্থ্য বজায় রাখা সম্ভব নয়। সুতরাং পুষ্টিকর উপাদান নেই এমন খাবার যতোটা পারেন কম খাবেন। সব সময় চেষ্টা করবেন টাটকা ও সতেজ খাবার খাওয়ার ।
সুন্দর ফিগার এবং কমনীয় ও লাবণ্যময় শরীর পেতে হলে শরীরকে যোগাতে হবে সঠিক পরিমাণে উপযুক্ত পুষ্টিকর উপাদান ও খাদ্য গুণে ভরপুর খাবার যাকে আমরা বলি সুষম খাদ্য। এ রকম খাবার তৈরি করার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে রান্নার সময় যাতে খাদ্যগুণ যতোটা সম্ভব বজায় রাখা যায়। খাদ্যদ্রব্যের বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদানগুলো কী কী ও এসব উপাদান শরীরে কী প্রয়োজনে লাগে, সে সঙ্গে না খেলে কী ক্ষতি হয় এবং কোন্ কোন্ খাদ্যদ্রব্যে এ সব পুষ্টিকর উপাদান সাধারণত পাওয়া যায়, এসব জেনে রাখা দরকার। তা না হলে ঠিকভাবে খাবার বাছা যাবে না।
খাদ্যদ্রব্যের পুষ্টিকর উপাদানগুলোকে প্রধানত ৫ ভাগে ভাগ করা হয়।
যথা : ১. কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা,
২. প্রোটিন বা দেহসার,
৩. ফ্যাট বা স্নেহপদার্থ,
৪. ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ, ও
৫. মিনারেল বা খনিজ পদার্থ ।
এসব উপাদান কোষ তৈরি, বিপাক ক্রিয়ার মাধ্যমে শক্তি বা এনার্জি তৈরি ও খাদদ্রেব্য হজমের কাজে সাহায্য করে। কোনো কোনো খাদ্যদ্রব্য কেবল একটি বিশেষ উপাদানই পাওয়া যায়, যেমন চিনিতে প্রধানত শর্করাই পাওয়া যায়। আবার গুড় বা মধুতে প্রায় সব রকম পুষ্টিকর উপাদানই পাওয়া যায়। সেজন্যে চিনির থেকে গুড় বা মধু বেশি পুষ্টিকর। একইভাবে, দুধে প্রায় সব রকম পুষ্টিকর উপাদান থাকে (একমাত্র আয়রন ছাড়া) আর সে কারণে দুধ খুব পুষ্টিকর খাদ্য।শরীরে শর্করা জাতীয় খাবারের দরকার সবচেয়ে বেশি। শর্করা জাতীয় খাবার থেকেই শারীরিক ও মানসিক কাজ-কর্ম চালু রাখার জন্যে প্রয়োজনীয় এনার্জি শরীরে তৈরি হয়। এছাড়া প্রোটিন পূর্ণ খাবার হজম করাতে সাহায্য করে। শর্করা জাতীয় খাদ্যদ্রব্যকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়।

যথা : ১. চিনি শর্করা,

২. মন্ড শর্করা এবং

৩. আঁশ-জাতীয় শর্করা।

১. কার্বোহাইড্রেট (শর্করা)

এর মধ্যে চিনি ও মন্ড শর্করা হজমের পরে গ্লুকোজে পরিণত হয়ে শরীরে শক্তি যেনোগায় । আঁশ জাতীয় শর্করাতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ বা ছিবড়ে থাকে। ফলে মল পরিষ্কারে সাহায্য করে।
কী কী খাদ্যদ্রব্যে পাওয়া যায়
১. চিনি শর্করা : চিনি, গুড়, মধু, আখ, বিট, কিশমিশ ইত্যাদি।
২. মন্ড শর্করা : চাল, গম, আলু, কলা, পাউরুটি, ময়দা, সব রকমের ডাল, ভুট্টা, চিড়া, মুড়ি, খই, বার্লি, সুজি ইত্যাদি।
৩. আশ-জাতীয় শর্করা : কড়াইশুটি, ওল, বিন, রাঙালু, কুমড়ো, আম, আতা, আঙুর, আনারস, আপেল, খেজুর, বেল, পেয়ারা, বাতাবি লেবু, মুসাম্বি, ডালিম, কালোজাম প্রভৃতি সবজি ও ফল ।
৪. কম হলে : ওজন কমে যায়; দুর্বল লাগে; মানসিক অবসাদ এবং শরীরে শক্তি উৎপাদন কমে যায়
৫. বেশি হলে : গ্লুকোজ থেকে চর্বিতে পরিণত হয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে জমা হয় এবং মেদবৃদ্ধি ঘটে ।
৬. দৈনিক প্রয়োজন : মোট ক্যালরির ৫০-৫৫%।
৭. শক্তি উৎপাদন ক্ষমতা : ১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট ৪ ক্যালরি এনার্জি উৎপাদন করে ।

pngwing.com 5

২. প্রোটিন (দেহসার)


পুষ্টিকর উপাদান হিসেবে শরীরে প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা কার্বো-হাইড্রেটের পরেই। আমাদের মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত প্রতিটি অংশের কোষ বিভিন্ন বৈশিষ্ট সম্পন্ন আলাদা আলাদা দেহ প্রোটিন গড়া। এসব কোষ ক্ষয়ে গেলে বা কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে যার উপাদান অনুযায়ী রক্ত থেকে অ্যামাইনো অ্যাসিড গ্রহণ করে সে রকমের বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন দেহ প্রোটিনে পরিণত করে ক্ষয় পূরণ, নতুন কোষ গঠন ও বৃদ্ধির কাজ করে। প্রাণীজ প্রোটিন হজম হবার পর ২০টিরও বেশি অ্যামাইনো এসিডে রূপান্তরিত হয়। এক একটা অ্যামাইনো অ্যাসিড এক এক রকমের কোষের কাজে লাগে। প্রোটিন শরীরে জমা থাকে না। শরীরে প্রোটিন গ্রহণের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি হলে সে সময় যদি শক্তির ঘাটতি হয়, তাহলে প্রোটিনের কিছুটা এনার্জিতে পরিণত হয়। তা না হলে বাকি বাড়তি প্রোটিন চর্বিতে পরিবর্তিত হয়। এছাড়া আরো অনেক রকমের জটিল জৈবিক কাজকর্মে প্রোটিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । যেমন : শরীরে বিভিন্ন রকম হরমোন তৈরি করা, হজমের জন্যে যেসব এনজাইম দরকার সেসব তৈরি করা, রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরি করা, শরীরে অম্ল ক্ষারের সমতা রক্ষা করা, রোগ প্রতিরোধক পদার্থ তৈরি করা ইত্যাদি ।
আগেই বলা হয়েছে প্রোটিন অনেক সময় শক্তি সৃষ্টি করে থাকে। সুতরাং খাদ্য গ্রহণের সময় খেয়াল রাখতে হবে শক্তির জন্য যে পরিমাণ খাদ্য দরকার সেটা কার্বো- হাইড্রেট জাতীয় খাদ্য থেকেই পাওয়া উচিত এবং প্রোটিনকে শক্তি সৃষ্টির কাজে না লাগিয়ে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় শারীরিক কাজকর্ম চালাবার কাজে প্রোটিন বাঁচানো সবচেয়ে ভালো । প্রোটিনকে দু ভাগে ভাগ করা হয় । যথা : ক. প্রাণীজ প্রোটিন ও খ. উদ্ভিজ্জ প্রোটিন।
কী খাদ্যদ্রব্যে পাওয়া যায় : প্রাণীজ, প্রোটিনের উৎস হলো সব রকমের মাংস, সব রকমের মাছ, মেটুলি, কিডনি, সসেজ, ডিম, দুধ, ছানা, দই, চিজ ইত্যাদি। উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের উৎস : চাল, গমের আটা, ময়দা, সব রকমের ডাল, সয়াবিন, ছোলা, কাজুবাদাম, কাগজি বাদাম, পেস্তা বাদাম, চিনাবাদাম, বিন, সিম, কাঁঠালবিচি, কড়াইশুটি, নারকেল, পুইশাক, সজনে শাক, পালং শাক, পোস্ত, রাজমা, কোকো, বার্লি ইত্যাদি। প্রোটিনের মূল উপাদান অ্যামাইনো এসিড। একমাত্র মাছ, মাংস মেটুলি, ডিম ও দুধ জাতীয় খাদ্য থেকে সবকটা অ্যামাইনো অ্যাসিডে পাওয়া যায় । প্রাণীজ প্রেটিন সহজে হজম হয়। এজন্যে খাদ্য নির্বাচনের সময় গৃহীত প্রেটিনের অর্ধেক প্রাণীজ প্রোটিন হওয় বাঞ্ছনীয় ।
কম হলে : দৈহিক খর্বতা, ওজন কমে যাওয়া, শরীরে ফোলা ভাব দেখা দেয়, ত্বক ও চুলের রঙ ফ্যাকাশে হয়ে যায়।
বেশি হলে : চর্বিতে পরিণত হয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে জমা হয় ।
দৈনিক প্রয়োজন : প্রতি কিলো দেহ ওজনে ন্যূনতম ১ গ্রাম বা মোট প্রয়োজনীয় ক্যালরির ২০-২৫%।
এনার্জি উৎপাদন ক্ষমতা : ১ গ্রাম প্রোটিন ৪ ক্যালরি শক্তি তৈরি করে।

৩. ফ্যাট (স্নেহপদার্থ)


পুষ্টিকর উপাদান হিসেবে স্নেহপদার্থ যুক্ত খাদ্যবস্তুর স্থান তৃতীয়। ফ্যাট থেকেই শরীরে ঘনীভূত শক্তি তৈরি হয়। এছাড়া শরীরের কোষকলায় ও হাড়ের কোষে প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম যেনোগাতে সাহায্য করে। কেবল স্নেহপদার্থে দ্রবীভূত হয়

এমন ভিটামিনসমূহ যেমন ‘এম্ব, ডিম্ব, ‘কেম্ব ও ‘ইম্ব শরীরে সরবরাহ করে। চামড়ার নিচে সঞ্চিত থেকে শরীরকে আঘাত, উত্তাপ ও ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা করে ও জমে থাকা পরিমিত পরিমাণ চর্বি চামড়াকে মর্সণ ও চকচকে করে যতালে। গরমকালে শরীরে চর্বি জাতীয় খাদ্যদ্রব্যের কম প্রয়োজন হয়। কিন্তু শীতকালে শরীর গরম রাখার জন্য এ জাতীয় খাদ্যদ্রব্যের প্রয়োজন হয় বেশি। স্নেহপদার্থ দু রকমের হয়।

যথা: ক, প্রাণিজ স্নেহপদার্থ ও

খ. উদ্ভিজ্জ স্নেহপদার্থ ।
১. কী কী খাদ্যদ্রব্যে পাওয়া যায় : প্রাণীজ স্নেহপদার্থের উৎস হলো মাসং বা, মাছের চর্বি, ঘি, মাখন, ডিম, কড লিভার তেল, শার্ক লিভার তেল ইত্যাদি। উদ্ভিজ্জ স্নেহপদার্থের উৎস হলো সর্ষের তেল, বাদাম তেল, বনস্পতি, মার্গারিন, কাজুবাদাম, পোস্ত, চিনাবাদাম, নারকেল, সয়াবিন, কোকো, মোষের দুধ ইত্যাদি।
২. কম হলে : চামড়া কর্কশ ও রুক্ষ হয়; লাবণ্য ও কমনীয়তা কমে যায় । শুধু স্নেহপদার্থে মিশতে পারে এমন ভিটামিন পরিমাণে কমে যায়; পেশির কর্মক্ষমতা কমে যায় ।

৩. বেশি হলে : চর্বি বেড়ে শরীর মোটা হয়ে যায়; হজমের গোলমাল বাড়ে একনাগাড়ে জমাট স্নেহপদার্থ ও বনস্পতি বেশিদিন খেয়ে গেলে এসব খাবারে কোলেস্টরল বেশি থাকে বলে রক্তবাহী নালীর ভেতরে আস্তরণ তৈরি হয়ে রক্ত চলাচলে বাঁধার সৃষ্টি হয়; হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস রোগের সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায় ।
৪. দৈনিক প্রয়োজন : মোট ক্যালরির ১৫-২০% ।
৫. শক্তি উৎপাদক ক্ষমতা : ১ গ্রাম ফ্যাট ৯ ক্যালরি শক্তি উৎপাদন করে।

৪. ভিটামিন (খাদ্যপ্রাণ)

পুষ্টিকর উপাদান হিসেবে ভিটামিনের স্থান কার্বো-হাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাটের পরেই। এখন পর্যন্ত ৬ রকম ভিটামিন আবিষ্কৃত হয়েছে-‘এ’, ‘সি’, ‘ডি’, ই’, ‘কে’ এবং ‘বি’-কমপ্লেক্স। এছাড়া ভিটামিন আবিষ্কৃত হলেও সেটি এখনো গবেষণার স্তরে রয়েছে। রোমান বর্ণমালা অনুসারে নামকরণ করা হলেও এগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটার নিজস্ব নাম রয়েছে। ভিটামিন বি-১২ টি ভিটামিনের সমষ্টি যাকে ‘বি-
কমপ্লেক্সম্ব বলা হয় ।
যদিও প্রতিটি ভিটামিনের নিজস্ব কাজের ক্ষেত্র আছে, কিন্তু এগুলো শরীরে দলবদ্ধ ভাবে কাজ করে অর্থাৎ শরীরে কোনো একটি ভিটামিনের অভাব হলে বাকিগুলোর স্বাভাবিক কাজ-কর্মেও বাধা সৃষ্টি হয়। সেজন্য খাবার খাওয়ার সময় সব রকম ভিটামিন যাতে পরিমাণমতো পাওয়া যায়। সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা উচিত । এই ৬ রকম ভিটামিনকে আবার দু ভাগে ভাগ করা হয় । ভিটামিন ‘এ’, ‘ডি’, ‘ই’ ও ‘কে’ হচ্ছে প্রথম ভাগ, এগুলে শুধু স্নেহপদার্থে দ্রবীভূত হয়ে শরীরে (যকৃতে) জমা থাকে যাতে প্রয়োজন দেখা দিলেই কাজে লাগতে পারে। ভিটামিন ‘বি-কমপ্লেক্স’ ও ‘সি’ হচ্ছে দ্বিতীয় ভাগ, এ দুটো পানিতে দ্রবীভূত হয় ও শরীরে প্রয়োজনের অতিরিক্ত হলে পেশবের সাথে বেরিয়ে যায়।

ভিটামিন এনার্জি সৃষ্টি করে না, কিন্তু শরীরের কোষ যে খাদ্যসার সংগ্রহ করে বেঁচে থাকে ও এনার্জি সৃষ্টি করে সেই বিপাকক্রিয়া চালু রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত কোষ সারিয়ে তোলা, স্নায়ুতন্ত্রির গঠন, চুল পড়া বন্ধ করা, চামড়ার মসৃণতা, রক্ত কণিকা তৈরি, চোখের জ্যোতি ঠিক রাখা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা, হজম সহায়ক এনজাইম বা জারক রস তৈরি করা এবং কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাটকে
এনার্জিতে পরিণত করার কাজে সাহায্য করে।
প্রকৃতিতে স্বাভাবিকভাবেই বা উদ্ভিদ-জাত খাদ্যদ্রব্যে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন পাওয়া যায়। তবে কী কী ভিটামিন থাকবে তা নির্ভর করে বেঁচে থাকার সময় ঐ প্রাণীটির খাদ্যের ওপর। দুধে সব রকম ভিটামিন থাকার কথা। কিন্তু যে গরু বা মোষকে শুধু শুকনো খড় খাওয়ানো হয় তার দুধে খুব কম পরিমাণ ভিটামিন থাকবে, এমন কি কোনো বিশেষ ভিটামিন নাও থাকতে পারে । সেজন্য প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় যথেষ্ট পরিমাণে টাটকা ও সতেজ শাক শবজি ও ফলমূল থাকলে ভিটামিনের অভাব কখনো হবে না । অনেকেই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ভিটামিন ট্যাবলেট খেয়ে থাকেন। এটা কিন্তু ঠিক নয়। শরীরে ভিটামিনের মাত্রা বেড়ে গেলে নানা জটিল অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। যদি পরিমাণমতো টাটকা শাক-সবজি, ফলমূল বা মাছ-মাংস আপনার দৈনিক খাবারের তালিকায় না থাকে তবে ডাক্তারকে সে কথা জানিয়ে তার পরামর্শমতো ভিটামিন যুক্ত ওষুধ খাবেন ।
ভিটামিন খুব সংবেদনশীল উপাদান। বেশি উত্তাপ, সূর্যের প্রখর তাপ, খাবার সোডা (যা রান্নার সময় মেশানো হয়) প্রভৃতির সংস্পর্শে ভিটামিন নষ্ট হয়ে যায়। শাক- সবজি, মাছ-মাংস ইত্যাদি পানিতে সিদ্ধ করে সে পানি ফেলে দিলে বেশির ভাগ ভিটামিন নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া বাসি খাবার, খোসা ছাড়ানো সবজি বা শস্যদানার অধিকাংশ ভিটামিনই নষ্ট হয়ে যায়। এ জন্যে সবসময় টাটকা ও সজীব শাক-সবজি, মূলকন্দ ইত্যাদি অল্প সিদ্ধ করে খাওয়াই ভালো ।
ভিটামির ‘এ’ : ত্বকের মসৃণতা দেহের উজ্জ্বল রঙ চোখের দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। কোষের ক্ষয়পূরণ গঠন ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। শরীরে প্রজনন ক্ষমতা ঠিক রাখে ও ঠাণ্ডার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তোলে । কেবল স্নেহ পদার্থে দ্রবীভূত হয়। সামান্য পরিমাণে যকৃতে সঞ্চিত থাকে ।
কী কী খাদ্যদ্রব্যে পাওয়া যায়: সব রকমের মাছ ও মাংস, মেটে, ডিম, দুধ, মধু, কড লিভার তেল, ছানা, দই, ঘি, মাখন; পাকা পেঁপে, আম, কমলালেবু, ট্যাপারি, কুল, কাঁঠাল, বাতাবি লেবু, ফুটি, কালোজাম, চিনাবাদাম, কাজুবাদাম প্রভৃতি ফল; গাজর, সয়াবিন, কুমড়ো, ডুমরো, উচ্ছে, চিচিঙ্গে, বাঁধাকপি, কাঁচা লংকা ইত্যাদি আনাজ; পালং, কলমি, কচু, ডাঁটা, নটে, পলতা, পুদিনা, ধনেপাতা, পেঁয়াজকলি, সজনে, মুলো, সজনে ডাটা, লেটুস ইত্যাদি শাক-পাতা ও কয়েক রকম ডাল। প্রকৃতপক্ষে উদ্ভিদ জাতীয় খাদ্যদ্রব্যে ভিটামিন ‘এ’ থাকে না। বরং ‘ক্যারোটিন’ নামক পদার্থ থাকে যার থেকে
জৈবিক প্রক্রিয়ায় শরীরে ভিটামিন ‘এ’ তৈরি হয়।

কম হলে : ত্বক শুষ্ক কর্কশ হয়ে যায়, দৃষ্টিশক্তি কমে যায়, উজ্জবল আলোতে চোখে অসুবিধে হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
দৈনিক প্রয়োজন : ৭৫০ মাইকোগ্রাম।

৫. ভিটামিন ‘বি-কমপ্লেক্স’


আলাদা ভিটামিনের দলীয় সমষ্টি। প্রতিদিন নির্দিষ্ট মাত্রায় সবকটি শরীরে যেনোগাতে না পারলে অন্যগুলো স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে না। টাটকা অবস্থায় যে খাবারে ভিটামিন ‘বি’ থাকে, সাধারণত সে রকম যে কোনো খাদ্যদ্রব্যে সবগুলো এক সাথে পাওয়া যায়। পানিতে দ্রবীভূত হয় বলে পরিমাণে বেড়ে গেলে মলমূত্রের সাথে বেরিয়ে যায়।

৬. ভিটামিন ‘বি-১’ (থায়ামিন)

pngwing.com 8 1

স্নায়ুর কাজ ঠিক রাখে, শক্তি তৈরিতে সাহায্য করে।
কী কী খাদ্যদ্রব্যে পাওয়া যায় : চাল, গম, মধু, পাউরুটি, মুড়ি, ডাল, কাজুবাদাম, কাগজি বাদাম, চিনাবাদাম, তিল, কাঁঠালবিচি, গাজর, বিন, কাঁচা মরিচ, আপেল, আতা, পাকা টমেটো, আনারস, আম, কাঁঠাল, বেল, কমলালেবু, কিশমিশ, দুধ, ডিম, মেটে, মাছ, মাংস ।
কম হলে : ক্ষুধামান্দ্য, কোষ্ঠাবদ্ধতা, মাথা ধরা, হাত-পা জ্বালা করা, বেরিবেরি রোগ । দৈনিক প্রয়োজন : ১.২ মিলিগ্রাম।

৭. ভিটামিন ‘বি-২’ (রিবোফ্লোবিন)

কোষের বিকাশ ও পুষ্টিতে সাহায্য করে, হজমের সময় খাদ্যবস্তু ভাঙতে সাহায্য করে, স্বচ্ছ দৃষ্টিশক্তি ও চামড়া সতেজ করতে সহায়তা করে।
কী কী খাদ্যদ্রব্যে পাওয়া যায় : মাছ, মাংস, মেটুলি, দুধ, চিজ, মধু, চাল, গম, ডাল, সবুজ টাটকা শাক-সবজি, কাঁচা লঙ্কা, বেগুন, কাজুবাদাম, কাগজি বাদাম, চিনাবাদাম, কিশমিশ, আতা, আনারস, কূল, পাকা পেঁপে, আম, কাঁঠাল ইত্যাদি ।

কম হলে : ঠোঁটের দু পাশ ফাটে, ত্বক শুষ্ক হয়, চোখ করকর করে, চোখ লাল হয়ে পানি পড়ে, জিভে ঘা হয়, নখ সহজে ভেঙে যায়, নখ সহজে ভেঙে যায়, মাথায় খুশকি হয় এবং চর্মরোগ হয় ইত্যাদি।
দৈনিক প্রয়োজন : ১.৫ মিলিগ্রাম।

৮. ভিটামিন ‘বি-৩’ (নিকোটিনিক অ্যাসিড)

হজমের সময় সবরকম খাদ্যবস্তু ভাঙতে সাহায্য করে, চামড়া সতেজ রাখে, মাড়ি সরল রাখে, মানসিক স্বাচ্ছন্দ্য বজায় রাখে।
কী কী খাদ্যদ্রব্যে পাওয়া যায় : মেটুলি, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, চিজ, মধু, টাটকা শাক-সবজি, কাঁচা মরিচ, বিন, বেগুন, চাল, ডাল, গম, চিনাবাদাম, কাজুবাদাম, কিশমিশ, আতা, আনারস, বুল, পাকা পেঁপে, বেল, কাঁঠাল ইত্যাদি।
কম হলে : ত্বক আঁশ ওঠার মতো হয় ও লালচে ভাব দেখা দেয়; হজমের গোলমাল ও ক্ষুধামন্দা, দাঁতের ক্ষয়, নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ, শারীরিক অবসাদ ও শৈথিলা, জিভ ও মুখে
যা এবং মাথা ধরা।
দৈনিক প্রয়োজন : ১৫ মিলিগ্রাম।

৯. ভিটামিন ‘বি-৫’ (প্যান্টোথেনিক এসিড)


স্নায়ুর স্বাভাবিক কাজকর্ম চালু রাখে, স্নেহ জাতীয় এসিড তৈরি করতে সাহায্য করে,
অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির কাজ স্বাভাবিক রাখে।
কী কী খাদ্যদ্রব্যে পাওয়া যায় : টাটকা শাক-সবজি, ব্যাঙের ছাতা, রাঙা আলু, আলু, সয়াবিন, চাল, গম, বাদাম, ইস্ট, মাংস, মাছ, মেটুলি, ডিম, দুধ, মধু ইত্যাদি।
কম হলে : মানসিক চাপ বৃদ্ধি, খিটখিটে ভাব, মাথা ধরা, অকালে চুল পাকে, পেশিতে ব্যথা এবং পায়ের পাতা জ্বালা করে ইত্যাদি ।

১০. ভিটামিন ‘বি-৬’ (পাইরিডক্সিন)

চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে, স্নায়ুতন্ত্রের কাজ স্বাভাবিক রাখে, রক্তের লোহিত কণিকা তৈরি করতে ও দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জনে সাহায্য করে।
কী কী খাদ্যদ্রব্য পাওয়া যায় : মাছ, মাংস, মেটুলি, চাল, ডাল, গম, মধু, গুড়, সয়াবিন, কলা, মটর, টাটকা ও সবুজ শাক-সবজি ইত্যাদি।
কম হলে : রক্তাল্পতা, মানসিক অবসাদ, স্নায়ূদৌর্বল্য, অনিদ্রা; পেশির স্বাভাবিক ক্ষমা কমে যায়। চর্মরোগ দেখা দেয় এবং দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। দৈনিক প্রয়োজন : ২ মিলিগ্রাম ।

১১. ভিটামিন ‘বি-১২’ (কোবালামিন)

রক্তের লোহিত কণিকা তৈরি করে, হাড়ের মজ্জায় রক্ত-কণিকাকে সুপরিণত করে, শরীরের কোষের স্বাভাবিক কাজকর্ম চালু রাখতে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় অংশ নেয়, স্নায়ুর কাজ স্বাভাবিক রাখে।
কী কী খাদ্যদ্রব্য পাওয়া যায় : মেটুলি, ডিম, দুধ, চিজ, সয়াবিন ।
কম হলে : রক্তাল্পতা এবং স্নায়ুরোগ দেখা দেয় ।

দৈনিক প্রয়োজন : ১ মাইকোগ্রাম ।

১২. ভিটামিন “বি-কমপ্লেক্স’ (ফল্ডি এসিড)

রত্তের লোহিত কণিকা তৈরিতে সাহায্য করে, কোষে নিউক্লিয়াস এসিড তৈরি করে কী কী খাদ্যদ্রব্যে পাওয়া যায় : মেটুলি, কড লিভার তেল, মাংস, ট্যাংরা ও রুই মাছ, বাঁধাকপি, পালংশাক, হিঞ্চে শাক ও টাটকা শাক-সবজি ইত্যাদি। কম হলে : রক্তাল্পতা, শারীরিক অবসাদ এবং রক্তে শ্বেত কণিকাও কমে যায়। দৈনিক প্রয়োজন : ১০০ মাইকোগ্রাম ।
এ ছাড়া ভিটামিন ‘বি’ কমপ্লেক্সে আরো যেসব ভিটামিন আছে সেগুলো হচ্ছে
বায়োটিন, কোলিন, ইনোসিটল, প্যারা-অ্যামাইনো-বেনজয়িক এসিড। বি- কমপ্লেক্সের অন্য ভিটামিনগুলো যেসব খাদ্যদ্রব্য পাওয়া যায়, এই শেষের ৪টি ভিটামিন ও সেসব খাদ্যদ্রব্যেই পাওয়া যায়। এই ৪টি ভিটামিনের দৈনিক প্রয়োজনের পরিমাণ সম্পর্কে এখনো গবেষণা চলছে। তবে দেহের স্বাভাবিক কাজ-কর্ম ও বি- কমপ্লেক্সের অন্য ভিটামিনের স্বাভাবিক কাজ-কর্মের জন্য যে সামান্য পরিমাণে এই ৪টি ভিটামিনের প্রয়োজন আছে এ ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত। বিশেষ করে, শেষের ভিটামিন অর্থাৎ প্যারা-অ্যামাইনো-বেনজয়িক অ্যাসিডের অভাব হলে বি-কমপ্লেক্সের বাকি ভিটামিনগুলো অকেজো হয়ে পড়ে। এটি লাল খোসাযুক্ত চাল, দুধ, বাঁধাকপি ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্যে পাওয়া যায় ।

pngwing.com 7 1

১৩. ভিটামিন ‘সি’ (অ্যাসকর্বিক)

দেহে সংযোজক কলা পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকার জন্যে যে অন্তঃকোষ থাকে তার সমতা রক্ষা করে চামড়ার টান টান ভাব বজায় রাখে। কোষ গঠন ও আঘাতপ্রাপ্ত কোষ দ্রুত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। সর্দি প্রভৃতি ভাইরাসজনিত রোগের বিরুদ্ধে দেহে প্রতিরোধ শক্তি গড়ে যতালে।
কী কী খাদ্যদ্রব্য পাওয়া যায় : দুধ, ছানা, মধু, কাগজি লেবু, পাতিলেবু, গন্ধরাজ লেবু, বাতাবি লেবু, কমলালেবু, সবেদা, লিচু, মুসম্বি, চেরি, আঙুর, আনারস, পেঁপে, পেয়ারা, ট্যাপারি, আম, আতা, টমেটো, কাঁচা মরিচ, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ডুমুর, কড়াইশুঁটি, বিন, অংকুরিত ছোলা, কলমি শাক, মূলা শাক, সজনে শাক, সজনে ডাঁটা, আমলকি, আমড়া, লেটুস পাতা ইত্যাদি ।
কম হলে : দাঁতের মাড়ি ফুলে রক্ত পড়ে; কাটা বা ঘা শুকোতে দেরি হয়, ঘন ঘন সর্দি হয় চামড়ায় ঢিলে ভাব দেখা দেয়। খুব বেশি দিন ধরে অভাব হলে স্কার্ভি রোগ দেখা দেয় দৈনিক প্রয়োজন : ৪০.৫০ মিলিগ্রাম।

১৪. ভিটামিন ‘ডি’

হাড় ও দাঁতের মূল উপাদানের হলো ক্যাসিয়াম ও ফসফরাস্। খাদ্যদ্রব্য হতে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসকে হাড় ও দাঁতে সরবরাহ করতে সাহায্য করে। যার ফলে হাড় ও দাঁতের ক্ষয়পূরণের কাজ ঠিকমতো চলতে পারে। ভিটামিন ‘ডি’ দুভাবে পাওয়া যায়। কিছু খাদ্যদ্রব্য হতে সরাসরি ও সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাবে চামড়ার নিচে সংশ্লেষিত হবার ফলে তৈরি হয়।
কম হলে : দাঁত ও হাড় ভঙুর ও দুর্বল হয়ে পড়ে, হাড়ের সন্ধিস্থানে ব্যথা হয়; পেশিতে ব্যথা হয়; শিরদাঁড়া কমজোরী ও দূর্বল হয়ে পড়ে।
দৈনিক প্রয়োজন : ২০০ আন্তর্জাতিক একক, জন্মনিয়ন্ত্রণের ট্যাবলেট গ্রহণ কালে বেশি লাগে।
কী কী খাদ্যদ্রব্যে পাওয়া যায় : মাখন, ডিম এবং দুধ।

১৫. ভিটামিন ‘কে’

রক্ত জমাট বাঁধার উপাদানগুলোর স্বাভাবিক সক্রিয়তা বজায় রাখে।
কী কী খাদ্যদ্রব্যে পাওয়া যায় : ডিম, মেটুলি, মধু, পালং শাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, আলু, গমের আটা ইত্যাদি।
দৈনিক প্রয়োজন : ১০ গ্রাম।

১৬. খনিজ পদার্থ

অপরিহার্য। যেমন : রক্তের লোহিত কণিকাই কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করে আর দেহে কোষের গঠন ও সারা শরীরের কাজকর্ম স্বাভাবিক রাখতে খনিজ পদার্থ এ লোহিত কণিকা তৈরি হতে আয়রন এবং কপার দরকার। এ ছাড়া শরীরে পানির ভাগ, ঠিক রাখা, স্নায়ুতন্ত্রের কাজ স্বাভাবিক রাখা, দেহের বিভিন্ন রস নিঃসরণকারী গ্রন্থি থেকে যেসব রস বেরোয় তা চালু রাখা ও শরীরের বিপাক ক্রিয়ার সব থেকে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় বিভিন্ন খনিজ পদার্থ ।
আমিষ-নিরামিষ সবরকম খাদ্যদ্রব্যেই খনিজ পদার্থ পাওয়া যায়। একই রকমের খাদ্যদ্রব্যে কিন্তু সব রকমের খনিজ পদার্থ থাকে না। সে জন্যে জানা দরকার কী কী খাদ্যদ্রব্যে কোন্ কোন্ খনিজ পদার্থ থাকে। একই সাথে জানা দরকার খনিজ পদার্থগুলো আমাদের শরীরে কীভাবে কাজে লাগে এবং প্রতিদিন খাবারের সাথে প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থগুলো যথেষ্ট পরিমাণে আমরা পাচ্ছি কিনা ।
খনিজ পদার্থের কাজ-কর্ম খাবারের সাথে খনিজ পদার্থ শরীরে প্রবেশ করার পর বিভিন্ন কাজকর্ম সক্রিয় হয় ও সব শেষে ঘাম ও পেশাবের সাথে শরীর থেকে বেরিয়ে যায় । এখানে সৌন্দর্য চর্চার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন খনিজ পদার্থের কাজ আলোচনা করা হলো :

১৭. সোডিয়াম

দেহে পানির ভাগ ঠিক রাখে, অম্ল ক্ষারের সমতা রক্ষা করে ।
কী কী খাদ্যদ্রব্যে পাওয়া যায় : খাবার লবণ, সামুদ্রিক মাছ, মাংস, পানি, নটে শাক, ধনে পাতা, লেটুস শাক, কচি নিমপাতা, কচি ভুট্টা, মূলা, বিট, ফুলকপি, ছোলার ডাল ইত্যাদি। কম হলে : দেহে পানির ভাগ ক্রমশ কমে যায়। ফলে চামড়া কুঁচকে যায়।
দৈনিক প্রয়োজন ২-৫ গ্রাম, গরমকালে কিছু বেশি। রক্তচাপ বেশি থাকলে ১ গ্রামই যথেষ্ট ।

সম্পর্কিত আর্টিকেল: ওজন বাড়ানোর সহজ উপায় | মোটা হওয়ার সহজ উপায়

১৮. ক্যাসিয়াম

ক্যালসিয়ামের প্রধান কাজ হলো হাড় ও দাঁতের উপাদান গঠন করা। এছাড়া স্নায়ুর স্বাভাবিক কাজ-কর্ম চালু রাখতে সাহায্য করে।
কী খাবারে পাওয়া যায় : দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, চিজ, মধু, কাগজি বাদাম, নারকেল, আতা, কমলালেবু, বিট, বিন, কুমড়ো, শাক, মূলো শাক, কলমি শাক, নটে শাক, পুঁই শাক, সজনে শাক ইত্যাদি।
কম হলে : হাড় ও দাঁত অশক্ত হয়। দৈনিক প্রয়োজন : ৫০০ মিলিগ্রাম।

১৯. ফসফরাস

ক্যাসিয়াম ছাড়া বাকি সব খনিজ পদার্থের মধ্যে ফসফরাস সবচেয়ে প্রয়োজনীয় । হাড় ও দাতের উপাদান তৈরি করতে সাহায্য করে, দেহে জলীয় অংশের সমতা রক্ষায়
অংশ নেয় এবং শর্করা ও ফ্যাটের বিপাক ক্রিয়ায় সক্রিয় অংশ নেয়।
কী কী খাদ্যদ্রব্যে পাওয়া পায় বেলে, ভেট্‌তি, ভোলো, গোয়াল, বাগদা চিংড়ি, চেলা, ফলুই, কালবোস, খোলশা, ল্যাটা, পারশে, গোল প্রভৃতি মাছ। মাংস, দুধ, ডিম, মেটুলি, মধু, চাল, গম, সবরকমের ডাল, ভুট্টা, কাজুবাদাম, কাগজি বাদাম, চিনাবাদাম, নারকেল বেল, শশা, আতা, কিশমিশ, কাঁঠাল, বিন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, কাঁঠাল বিচি, কড়াইশুঁটি, কচু, উচ্ছে, পলতা পাতা, নটে শাক, কুমড়ো শাক, পুঁই শাক, সজনে ডাঁটা, কচি নিমপাতা ইত্যাদি।
কম হলে : দাঁত ও হাড় অশক্ত হয়।
দৈনিক প্রয়োজন : ১ গ্রাম।

২০. আয়রন

রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে সাহায্য করে, এই হিমোগ্লোবিনই কোষে কোষে অক্সিজেন বয়ে নিয়ে যায়, যার ফলে বিপাকক্রিয়ার সময় শরীরে এনার্জি তৈরি হয়। কী কী খাবারে পাওয় যায় : মাছ, মাংস, ডিস, মেটুলি, মধু, গুড়, বিন, কাজু বাদাম, চিনাবাদাম, কিশমিশ, ডাল, পেঁয়াজ, শশা, কাঁচাকলা, পাকা কলা, উচ্ছে, সজনে ডাঁটা, সরষে শাক, নটে শাব, মূলা শাক, মেথি শাক ইত্যাদি ।
কম হলে : রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যায়, চামড়ার ঔজ্জ্বল্য কমে যায়, কম বয়সে চুল পাকে, শারীরিক অবসাদ দেখা দেয়।
দৈনিক প্রয়োজন : ৩২ মিলিগ্রাম।

২১. আয়োডিন

দেহের গুরুত্বপূর্ণ থাইরয়েড গ্রন্থির কাজ স্বাভাবিক রাখে। এ গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন (থাইরক্সিন) দেহের বিপাকক্রিয়ার হার নিয়ন্ত্রণ করে ও এভাবে শরীরের
ওজনের সমতা রক্ষা করে।
কী কী খাদ্যদ্রব্যে পাওয়া যায় : সামুদ্রিক মাছ খাবার লবণ, মাংস, দুধ, ডিম ইত্যাদি । কম হলে : গলগণ্ড রোগ দেখা দিতে পারে, হাত-মুখ ফুলে যায়, চুল উঠে যায়, শারীরিক ও মানসিক অবসাদ দেখা দেয় ।
দৈনিক প্রয়োজন : ১০০-৫০০ মাইকোগ্রাম।

২২. ম্যাগনেশিয়াম

বিপাক্রিয়ায় অংশ নেয়, জারক রস অর্থাৎ এনজাইমগুলোকে সক্রিয় করতে সাহায্য করে, অন্যান্য খনিজ পদার্থ ও ভিটামিনের বাহক হিসেবে কাজ করে। শাক-সবজিতে যে ক্লোরোফিল থাকে তার অন্যতম উপাদান হলো ম্যাগনেশিয়াম ।
কী খাবারে পাওয়া যায় : সামুদ্রিক মাছ, বার্লি, গুড়, মধু, বিন, ডাল, কাগজি বাদাম, চিনাবাদাম, কলা ইত্যাদি।
কম হলে : পেশির জোর কমে যায়; স্নায়ুদৌর্বল্য দেখা দেয়, শারীরিক ও মানসিক অবসাদ দেখা দেয়।
দৈনিক প্রয়োজন : ৩০০ মিলিগ্রাম

২৩. পটাসিয়াম

পেশি, হৃৎপিণ্ড ও স্নায়ুর কাজকর্ম স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। দেহে সোডিয়ামের
সাথে একসঙ্গে কাজ করে।
কী খাবারে পাওয়া যায় : কলা, মাখন, আলু, বিন, বাদাম, ডাল, মধু ইত্যাদি। কম হলে : পেশির জোর কমে যায়, মানসিক অবসাদ ও স্নায়ুরোগ দেখা দেয়। দৈনিক প্রয়োজন : ০১.৫-২.৫ মিলিগ্রাম ।
এছাড়া ক্লোরিন, কপার, জিংক, সালফার, ক্রোমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, কোবাল্ট, সেলিয়াম, ফুরিন ইত্যাদি খনিজ পদার্থ খুব অল্প পরিমাণে শরীরের দরকার হয় । অন্যান্য খনিজ পদার্থের মতো এসব খনিজ পদার্থ ও বিভিন্ন জৈবিক ক্রিয়ায় কোষের গঠন ও বৃদ্ধি ঠিক রাখা, বিপাকক্রিয়া, হাড় ও দাঁতের গঠন ও উজ্জ্বলতা বজায় রাখা, রক্তের বিভিন্ন উপাদান তৈরি করা, অম্ল ক্ষারের সমতা রক্ষা করা, বিভিন্ন জারক রস বা এনজাইমকে সাহায্য করে এবং এভাবে সুস্থ নীরোগ ও লাবণ্যময় শরীর গড়ে যতালে। এসব খনিজ পদার্থ পাওয়া যাবে বিভিন্ন রকম ডাল, চাল, গরম, মধু, দুধ ডিম, মাছ, মাংস, টমেটো, নানা রকম সতেজ শাকসবজি ও মূল এবং গুড় ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্যে।

পানি :

আমরা জানি বিশুদ্ধ পানির অপর নাম জীবন! আমাদের শরীরের অঙ্গপ্রতঙ্গ সতেজ ও সবল রাখার জন্য যেমন পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজন তদ্রূপ পানিরও প্রয়োজন অপরিসীম।

শরীরের পক্ষে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় পদার্থ পানি। সাধারণত প্রতিদিন শরীরে যে পরিমাণ পানির প্রয়োজন হয় তার অর্ধেক পরিমাণ আমরা পাই সেসব খাবার থেকে। কারণ, প্রায় সব খাদ্যদ্রব্যেই কিছু না কিছু পরিমাণে পানি থাকে। এভাবে খাবারের সাথে যে পরিমাণ পানি শরীর পায় তা কিন্তু যথেষ্ট নয়। এ জন্যেই প্রয়োজন হয় আরো কিছু পরিমাণ পানির যা আমরা সরাসরি গ্রহণ করি অর্থাৎ পান করি। পান করার পর বিভিন্ন কোষ ও রক্তের মধ্যে পানি সঞ্চিত থেকে শরীরে জলীয় ভাগের সমতা রক্ষা করে। শরীরে পানির ভাগ কমে গেলে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের উপকারিতা পুরোপুরি পাওয়া যাবে না। এছাড়া শরীরের মধ্যে যেসব দূষিত ও অবাঞ্চিত পদার্থ
থাকে তা ঘাম ও পেশাবের সাথে বের করে দিতে পানি সাহায্য করে

উপসংহার :

প্রদত্ত যে সকল খাদ্যসমূহ নিয়ে আজকে আলোচনা করা হল সেই গুলো আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখা বাঞ্চিতনীয়। আমাদের সকলের উচিত এই খাদ্যগুলো আমাদের সুষম বন্টনে গ্রহণ করা উচিত। আজকে এই পর্যন্তেও আশা করছি পরবর্তী কোনো গুরুত্ব পূর্ণ টপিকস নিয়ে আবার হাজির হব আপনাদের সামনে । ধন্যবাদ সকলকেই।

Please Share This Post in Your Social Media