1. mdasattarsarker07@gmail.com : shimulvisa@gmail.com :
প্লেগ রোগ কি ? ধর্মীয় ব্যাখ্যা এবং চিকিৎসা | Tips2fit
1
  • ৩৪১
প্লেগ রোগ কি ? ধর্মীয় ব্যাখ্যা এবং চিকিৎসা
61 / 100

সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম-এ হযরত আমির ইবনু সাআদ ইবনু আবি ওয়াক্কাস রহ. তাঁর পিতা হযরত সাআদ ইবনু ওয়াক্কাস রাযি. থেকে বর্ণনা করেন, হযরত সাআদ ইবনু আবি ওয়াক্কাস রাযি. উসামা ইবনু যাইদ রাযি.-কে জিজ্ঞেস করেন, আপনি রাসুলুল্লাহ হতে প্লেগ সম্বন্ধে কী শুনেছেন? উসামা রাযি. বললেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্লেগ একটি আযাব, যা বনি- ইসরাইলের এক সম্প্রদায়ের ওপর পতিত হয়েছিল অথবা তোমাদের পূর্বে যারা ছিল, তাদের ওপর এসেছিল এক মহামারী। তোমরা যখন কোনো স্থানে প্লেগ মহামারীর ছড়াছড়ি শুনতে পাও, তখন তোমরা সেখানে যাবে না। আর যখন প্লেগ মহামারী এমন জায়গায় দেখা দেয়, যেখানে তুমি অবস্থান করছো, তখন সে স্থান হতে পালানোর লক্ষ্যে বের হবে না।
সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম-এ হযরত হাফসা বিনতে সিরিন রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আনাস ইবনু মালিক রাযি. বলেন, রাসুল বলেন, প্লেগ রোগে মারা গেলে প্রত্যেক মুসলিমের জন্য তা শাহাদাত হিসাবে গণ্য হবে।

মহামারী প্লেগ রোগের ইতিহাস ও এর বাহক

প্লেগ (Plague) ব্যাকটেরিয়াজনিত একটি মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধি। আস- সিহাহ’ নামক গ্রন্থে এ কথাটি উল্লেখ আছে। চিকিৎসকদের মতে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ রোগ মহামারী আকারে দেখা দেয়। তাই ব্যাপক প্রাণসংহারকারী বা অনিষ্টকর কোনো পরিস্থিতি বর্ণনায় ‘প্লেগ’ শব্দের ব্যবহার দেখা যায়। দেহের যে স্থান এ রোগে আক্রান্ত, সে স্থানটি কালো, সাদা বা বিবর্ণ হয়ে যায়। আক্রান্ত স্থানটি অতিদ্রুত ক্ষতযুক্ত বা পচে যায়। এটা সাধারণত দেহের তিন জায়গায় হয়ে থাকে। স্থানগুলো হলো,
১. বগলের নিচে।
২. কানের পেছনে।
৩. নাকের ডগায় অথবা দেহের নরম গোশতে।
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাযি.-এর একটি হাদিসে এসেছে, তিনি রাসুল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করেন, বর্শা বা ছুরিকাঘাত তো আমরা চিনি, কিন্তু প্লেড় কি?
রাসুল (সা.) এর উত্তরে বলেন, প্লেগ হলো উটের গ্রন্থি বা গ্ল্যান্ডের মতো একটি গ্রন্থি, যা বগল বা দেহের কোমল অংশ থেকে বের হয়।

চিকিৎসক ও ভাষাবিদগণের নিকট প্লেগ রোগের ব্যাখ্যাঃ

চিকিৎসকগণ বলেন, দেহের নরম গোশত, বগল বা উরুর ভেতরের দিক, কানের নিচে ও নাকের ডগায় বিষাক্ত ও দূষিত ফোঁড়া বা ব্রণ জাতীয় কিছু হলে সেটাকে ‘প্লেগ’ বলা হয়। দূষিত রক্ত (যা বিষাক্ত পদার্থে পরিণত হয়) প্রেগ রোগের অন্যতম কারণ। দূষিত রক্ত দেহের অঙ্গ নষ্ট ও পরিবর্তন করে দেয়। কখনো কখনো রক্তক্ষরণ ও পুঁজ ঝরায় ।
মহামারী প্লেগ অন্তরে এক খারাপ অবস্থা তৈরি করে, যা বমি, হৃৎপিণ্ডের কম্পন ও সংজ্ঞাহীনতার কারণ হয়। হৃদয়ে দ্রুত খারাপ অবস্থা সৃষ্টি করে এবং প্রাণঘাতী হয়, এমন প্রতিটি সংক্রমণ রোগকে সাধারণভাবে প্লেগ বলা যায়। তবে এই রোগটি শুধু দেহের নরম অংশকেই বিশেষভাবে আক্রান্ত করে।

কারণ, এই রোগটি শুধু শরীরের দুর্বল ও নরম অঙ্গকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে। তবে প্লেগ রোগটি বগল ও কানের পেছনের অংশকে বেশি সংক্রমিত করে। থাকে। যেহেতু বগল ও কান মাথার অনেক কাছাকাছি। প্লেগের কারণে যে রুগীর দেহের কোনো অংশ লালচে হয়ে যায়, তার সুস্থ হওয়ার মোটামুটি সম্ভাবনা থাকে। আর আক্রান্ত স্থান হলদে হলে, সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা একটু কম। তবে সংক্রমিত স্থানটি কালচে হলে, সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই
চলে।

কলেরা বা কলেরা-উপদ্রব এলাকায় প্লেগ হলে তখন সেটাকে ‘কলেরা’-ই বলা হয়ে থাকে। যেমন ভাষাবিদ খলিল ইবনু আহমাদ বলেন, কলেরা হলো প্রেগ। প্রেগ। কথিত আছে, প্রত্যেক রোগ যা ব্যাপক হয়ে যায় তা হলো প্লেগ। যেহেতু ‘কলেরা’ ও ‘প্লেগ’ শব্দ দু’টির মাঝে ‘ব্যাপকতা-সীমাবদ্ধতা’ (উমুম- খুসুস) এর সম্পর্ক। তাই প্রত্যেক প্লেগ রোগকে কলেরা বলা যেতে পারে। তবে প্রত্যেক কলেরা প্লেগ নয়। তেমনিভাবে সকল সাধারণ রোগও ‘প্লেগ’ থেকে অধিক ব্যাপক। কারণ, প্লেগ তো সেই সাধারণ রোগগুলোর মধ্যে একটি। উপরে দেহের যে কয়টি স্থানের কথা উল্লিখিত হয়েছে, সে স্থানগুলোতেই ফোঁড়া, টিউমার, ক্ষত সৃষ্টি হয়ে থাকলে, তাকে প্লেগ বলা হয় ।

প্লেগ রোগ সম্পর্কে গ্রন্থকারের মতামতঃ

আমি (গ্রন্থকার) বলব, এসব ক্ষত, ফোঁড়া, টিউমার ইত্যাদি প্লেগের আলামত হতে পারে। তবে এগুলোই প্লেগ নয়। ডাক্তাররা সাধারণত এই আলামতগুলো দেখে থাকেন, তাই তারা এগুলোকেই প্লেগ বলে থাকেন।
প্লেগ তিনটি অর্থ বহন করে। যথা,

১. প্রথমত ঐ সকল স্পষ্ট আলামত বা উপসর্গ, যেটা ডাক্তাররা উল্লেখ করে থাকেন।
২. যে মৃত্যু এই রোগের কারণে হয়। রাসুল -এর হাদিস; প্লেগ প্রত্যেক মুসলিমের জন্য শাহাদত। -এ হাদিস দ্বারা এটাই উদ্দেশ্য।
৩. এই রোগের কার্যকরী কারণ” এই হাদিসে উল্লেখ হয়েছে। রাসুল বলেন, এটা হলো বনি-ইসরাইলের ওপর পতিত মহামারীর অবশিষ্টাংশ। অন্য এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, প্লেগ জিনজাতির স্পর্শের কারণে হয়ে থাকে।
এটা আল্লাহ তাআলার প্রেরিত একজন নবির বদ-দুআর ফলে এসেছে। এসব কারণ ও আলামত চিকিৎসকদের প্রদত্ত কারণ বা আলামত নয়। চিকিৎসকদের কাছে এগুলোর পক্ষে-বিপক্ষে কোনো প্রমাণ বা নির্দেশনা নেই। নবি-রাসুলগণ অদৃশ্য বিষয়ের সংবাদ দিয়ে থাকেন।

পবিত্রাত্মার মাধ্যমে প্রেতাত্মা প্রতিহত করণঃ

আর চিকিৎসকগণ প্লেগের ক্ষেত্রে যে উপসর্গ বা আলামতগুলোর কথা বলে থাকেন, এতে এটা বলা যায় না যে, প্লেগ আত্মার বিষয়গুলোর একটি নয়। কারণ স্বভাব-প্রকৃতিতে আত্মার প্রভাব এবং আত্মার ব্যাধি ও ধ্বংস এমন এক বিষয়, যা আত্মা ও আত্মার প্রভাব এবং শরীরের প্রতিক্রিয়া ও তার স্বভাবরে ব্যাপারে অজ্ঞ ব্যক্তি-ই অস্বীকার করতে পারে।
আল্লাহ তাআলা মহামারি সৃষ্টি করার সময় এবং আবহাওয়া নষ্টের সময় মানুষের দেহের মাঝে আত্মাকে স্বাধীন করে দেন। যেমনিভাবে তিনি আত্মাকে স্বাধীন করে দেন, তেমনি কতিপয় নিকৃষ্ট দ্রব্যের ক্ষেত্রেও বিশেষ উম্মুক্ততা প্রদান করেন যা আত্মার মাঝে মন্দ অবস্থা সৃষ্টি করে। বিশেষ করে রক্তের উত্তেজনার সময়, পিত্ত জ্বলন এবং বীর্যের উত্তেজনার সময় এই বিষয়টি বেশি। পরিলক্ষীত হয়। কেননা প্রেতাত্মা এগুলো দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে এমন কাজ করতে সক্ষম হয়। আর যে সকল ব্যক্তিবর্গ এ গুলোতে আক্রান্ত নয়,তাদের সাথে সুবিধা করতে পারে না। আর প্রেতাত্মাকে প্রতিহত করার সবচেয়ে শক্তিশালী উপকরণ হলো, যিকর, দুআ, অনুনয়-বিনয়, কাকুতি- মিনতি, দান এবং কুরআনে কারিম তিলাওয়াত। উল্লেখিত আমলগুলো ফেরেস্তাদের আত্মাকে নামিয়ে আনে। যারা ঐ মন্দ আত্মাগুলোকে পরাভূত করে, তাদের অনিষ্টকে বাতিল করে এবং তাদের প্রভাব দূরিভূত করে ।

মাসনুন দুআ ও ঝাড়ফুঁকের বিশেষ ক্ষমতাঃ

এ ব্যাপারে স্পষ্ট ও বিস্তারিত বর্ণনা আমরা ‘ঝাড়ফুঁক, নববি তাবিজ, যিকির, দুআ ও উত্তম আমল দ্বারা আরোগ্য লাভ’ সংক্রান্ত পরিচ্ছেদে করব। ইনশাআল্লাহ। সেখানে আমরা এটাও স্পষ্ট করব যে, সাধারণ চিকিৎসকদের সাথে নববি চিকিৎসাকে তুলনা করা ফুটপাতের অজ্ঞদের চিকিৎসার সাথে ডাক্তারদের চিকিৎসাকে তুলনা করার মতো। যেমনটা কিছু কিছু বিজ্ঞ ডাক্তাররা স্বীকার করেছেন।
আমরা ঐ আলোচনায় আরও উল্লেখ করব, মানুষের স্বভাব-প্রকৃতি আত্মার দ্বারা অধিক প্রভাবিত। তাবিজ-কবচ, ঝাড়ফুঁক এবং দুআর ওপরে কোনো ওষুধ নেই। এগুলোর এতো প্রভাব যে, প্রাণঘাতী বিষের শক্তিও অকার্যকার করে দিতে পারে।
দূষিত বা বিষাক্ত বাতাস প্লেগ রোগের অন্যতম পূর্ণাঙ্গ ও কার্যকরী কারণ। কেননা বাতাসের উপাদান দূষিত হওয়ার ফলে মহামারী ঘটলে বাতাস দূষিত হয়ে পড়ে। ফলে এই দূষিত বাতাসে খারাপ প্রভাব বেশি হওয়ার কারণে বছরের যে কোনোসময় এটা দুর্গন্ধ ও বিষাক্ততা ছড়াতে পারে। তবে এটা গ্রীষ্মকাল ও শরৎকালের শেষদিকে বেশি হয়ে থাকে। কারণ গ্রীষ্মকালীন পরিবেশে প্রচণ্ড তিক্ত বর্জ্য ইত্যাদি বেশি জমে থাকে। তবে এটি দ্রবীভূত না হয়ে বাষ্পীয় হয়। অর্থাৎ বাতাসের সাথে মিশে যায় ।
অন্যদিকে শরৎকালে আবহাওয়া ঠাণ্ডা থাকার কারণে গ্রীষ্মকালে পরিবেশে জমে থাকা অপরিণত বর্জ্যপদার্থগুলো এক জায়গায় আটকে থাকে। পরে এগুলো উত্তপ্ত হয়ে পরিবেশে দুর্গন্ধ ছড়ায়। এর ফলে দুর্গন্ধযুক্ত বিষাক্ত রোগগুলো সৃষ্টি হয়। বিশেষত, কোনো দুর্বল ও নিষ্ক্রিয় শরীর (যাতে বেশি পরিমাণ দূষিত পদার্থ রয়েছে) আগে থেকেই যখন পরিবেশ থেকে রোগ গ্রহণে প্রস্তুত থাকে, এমন বিষাক্ত ও দুর্গন্ধ বাতাসে আক্রান্ত রুগীকে সুস্থ করা একপ্রকার অসম্ভব হয়ে পড়ে।

Please Share This Post in Your Social Media