সুবাত/সাহরী অর্থ অতিনিদ্রা বা আচ্ছন্ন অবস্থায় ঘুম। কোমা (COMA) ইউ শব্দ, সুবাত আরবী শব্দ। এ দুই শব্দের শাব্দিক অর্থ আরাম বা বিশ্রাম। ইউনা পরিভাষায় Coma-এর অর্থ অস্বাভাবিক নিদ্রা বা অতিনিদ্রা বা অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকা ।
এটি এমন এক অস্বাভাবিক নিদ্রা, যা বিভিন্ন রোগের উপসর্গ হিসেবে প্রকাশ পায়। এতে অত্যধিক ক্ষতিকারক বা মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি হয় । রোগী সহজে নিদ্রা হয়ে পরিত্রাণ পায় না এবং এটা বিভিন্ন রোগের গুরুত্বপূর্ণ একটা লক্ষণ। যেমন সারসাম রোগের অবস্থায় দেমাগের মধ্যে দূষিত পদার্থ সঞ্চিত হতে থাকে। ে কারণে অতিনিদ্রা হয়। এ কোন রোগ নয়, রোগের উপসর্গ মাত্র ।
১. সূয়ে মিযাজ মাদ্দী ও সাদা কিংবা বলগমী মাদ্দা দেমাগে সঞ্চিত হলে।
২. সারসাম হলে।
৩. মস্তিষ্কের মধ্যে মারাত্মক আঘাত এবং রক্তক্ষরণ হলে ।
৪. মস্তিষ্কে টিউমার হলে ।
৫. মস্তিষ্কের মধ্যে মাইয়াতুদ্দাম জমা হলে বা পুঁজের সৃষ্টি হলে।
৬.নেশা জাতীয় ঔষধ, খাদ্য পানীয় গ্রহণ করলে । যেমন আফিম, গাঁজা, সিডাক্সিন। ৭. প্রস্রাবের বিষক্রিয়া হলে ।
৮. যিয়াবেতীস হলে।
৯. রক্তে গ্লুকোজের স্বল্পতা হলে ।
১০. রক্তে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হলে (Septicaemia)
১১. টাইফয়েড, নিউমোনিয়া, যকৃত এবং গুর্দার রোগ হলে ।
১২. প্রস্রাবের সাথে নিয়মিত এসিটিক এসিড নিঃসরণ হওয়া, কোন কারণে তা নিঃসরণ না হয়ে মস্তিষ্কে জমা হলে ।
১৩. স্নায়বিক দুর্বলতা ঘটলে ।
১৪. মস্তিষ্কের অতিরিক্ত পরিশ্রম হলে।
১৫. অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ করলে ।
১৬. মস্তিষ্কে দূষিত মাদ্দা জমা হলে ।
ক. বলগমের আধিক্যের কারণে সুবাত হলে নিম্নোক্ত লক্ষণসমূহ প্রকাশ পাবে-
১. মাথা ভারী হবে,
২. চেহারা ফোলা ফোলা হবে,
৩.নাক দিয়ে অবিরাম পানি ঝরবে,
৪.মুখ দিয়ে থুথু পড়বে।
৫. Para nasal sinus X – ray করলে বলগম সঞ্চয় হওয়া বুঝা যাবে, বা Haemorrhage হলে তা বোঝা যাবে ।
৬. দ্রুত সংকোচন ও সম্প্রসারণের লক্ষণ প্রকাশ পাবে।
৭. নব্য বতী, জয়ীফ, মৌজী হবে এবং নব্য এর সংকোচন-সম্প্রসারণ থাকবে। নব্য কোমলতা হতে কাঠিন্যের দিকে অগ্রসর হবে।
খ. খুন বা রক্তাধিক্যের কারণে সুবাত হলে নিম্নোক্ত লক্ষণসমূহ প্রকাশ পাবে
১. চেহারা ও চোখ লাল হবে ।
২. হঠাৎ জ্ঞান হারাবে।
৩. শ্বাস-প্রশ্বাস অতি ঘন ঘন হবে।
৪. কিছুক্ষণ পর পর পেশী সংকুচিত হবে।
৫. রোগীর এক অংশ অবশ হয়ে যেতে পারে। মুখমণ্ডলের দিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, মুখ বক্র অবস্থায় বা লাকওয়া অবস্থায় আছে।
৬. বৃদ্ধদের বেলায় শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে সাথে গলার চর্মে সংকোচন ও সম্প্রসারণ ঘটবে।
৭. এক দিকের চোখের পুত্তলি অন্য দিকে যায় এবং চোখ ছোট হয়ে যায় ।
৮. এক দিকের হাত পা অন্য দিকের তুলনায় নরম হয়ে যায় । একটু উপরে তুলে ছেড়ে দিলে দ্রুত পড়ে যায়।
৯. নব্য সরী ও মোনতালি হবে।
ক. সর্ব প্রথম সাদার ও দাওর হবে।
খ. কান ভারী ভারী মনে হবে, কানে শোঁ শোঁ আওয়াজ হবে । চোখে সরিষার ফুল দেখা যাবে।
গ. তবে খালি হলে লক্ষণ কম হবে।
ঘ. বক্ষের কোন রোগের, যেমন- যাতুল জানব ও জাতুর রিয়াহ ইত্যাদির লক্ষণ প্রকাশ পাবে।
ঙ. বিভিন্ন ঔষধ সেবনের ফলে, যেমন- ফেনারগান, সিডাক্সিন ইত্যাদির ব্যবহার সুবাত দেখা দিতে পারে। সুবাতের উসুলে এলাজ বলগমী সুবাতের ক্ষেত্রে-
১. মুনজি ও মুসহিলে বলগম দিতে হবে।
২. পাশবিয়া বা পানি ঢালতে হবে।
৩. সউত বা নস্যি দিতে হবে।
৪. ছুয়ে হজম থাকলে তা দূর করতে হবে।
৫. উষ্ণ প্রকৃতির ঔষধ দ্বারা নতুল করতে হবে।
৬. সামগ্রিকভাবে মাথা থেকে বলগম বা দূষিত মাদ্দা নিঃসরণ করতে হবে।
৭. উষ্ণ প্রকৃতির খোশবু ব্যবহার করতে হবে।
৮. তাকমিদ বা গরম সেঁক দিতে হবে।
১. মুনজিযাতে বলগম- ব্যবহারকরণ-
আসলুস সূস ৫ গ্রাম.
মোনাক্কা ৯টি
বাদিয়ান ৫ গ্রাম.
শাকাকায়ী ৫ গ্রাম.
পরশিওসা ৭ গ্রাম.
গুলে সুখ ৭ গ্রাম.
আঞ্জীরে জর্দ ২টি
উপরের সব উপাদানসমূহ নিমকুফতা করে ২০০ মি. লি. গরম পানিতে রাত্রে ভিজিয়ে সকালে ছেঁকে ৩০ মি. লি. মধুর সাথে গুলকন্দসহ খালি পেটে সেব্য।
২. মুসহিলে বলগম ব্যবহার করা।
৩. পাশবিয়া প্রয়োগ করা। এজন্য গমের ভূষি ৩৬ গ্রাম, লবণ ৮ গ্রাম ৪ লিটার পানিতে সিদ্ধ করে গরম থাকা অবস্থায় পায়ে ঢালতে হবে।
৪. সউত বা নস্যি ব্যবহার করা।
৫. মুনজিযে ও মুসহিলে বলগম দেবার পর কুস্তায়ে খুবসুল হাদীদ, কুস্তায়ে মারজান, জাওয়ারিশে বিছবাছা, অথবা জাওয়ারিশে জালীনূস সকাল-বিকাল সেব্য।
৬. এত্রিফলে কাশনিজি ৬ গ্রাম পরিমাণে সেব্য।
৭. সূয়ে হজম বা গ্যাসের কারণে সুবাত হলে জাওয়ারিশে জালীনূস বা জাওয়ারিশে কমুনী ৬ গ্রাম করে দুবার সেব্য ।
জাওঃ জালীনূসের সাথে আরক বাদিয়ান ৪ চা চামচ করে দুবার সেব্য।
১. অরিদে কাইফাল থেকে ফসদ করতে হবে।
২. শিঙ্গা লাগাতে হবে।
৩. মুলাইয়্যেন বা মৃদু বিরেচক প্রদান করতে হবে।
৪. ঠাণ্ডা জাতীয় তেল ব্যবহার করতে হবে ।
৫. সউত বা নস্যি দিতে হবে।
৬.শীতল প্রকৃতির লকলকা ব্যবহার করতে হবে। যেমন— ছন্দল, গিলে আরমানী, কাফুর ইত্যাদি।
৭. শীতল প্রকৃতির ঔষধ ব্যবহার করতে হবে। যেমন- শরবতে উন্নাব, শরবতে নীলূফর, শরবতে কাহু ইত্যাদি।
৮. যাগতুদ্দম বেড়ে গেলে তা কমানোর দাওয়া ব্যবহার করতে হবে।
Related Post: