1. mdasattarsarker07@gmail.com : shimulvisa@gmail.com :
মৃগী রোগ কি? লক্ষণ, কারন ও চিকিৎসা পদ্ধতি | Tips2fit
মৃগী রোগ কি?
  • ৩১১
মৃগী রোগ কি? লক্ষণ, কারন ও চিকিৎসা পদ্ধতি
89 / 100

ভূমিকাঃ

সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম গ্রন্থদ্বয়ে এসেছে, হযরত আত্বা ইবনু আবু রাবাহ রহ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাযি. আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি কি তোমাকে একজন জান্নাতি মহিলা দেখাব না? আমি জবাব দিলাম, অবশ্যই দেখাবেন। তখন তিনি বললেন, এই কালো রঙের মহিলাটি, সে রাসুল এর নিকট এসেছিল। তারপর সে বলল, আমি মৃগী রোগে আক্রান্ত হই এবং এ অবস্থায় আমার লজ্জাস্থান খুলে যায়। সুতরাং আপনি আমার জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করুন! রাসুল বললেন, তুমি যদি চাও, ধৈর্যধারণ করতে পারো। তোমার জন্য জান্নাত আছে। আর তুমি যদি চাও, তাহলে আমি আল্লাহর কাছে দুআ করি, যেন তোমাকে আরোগ্য দান করেন। মহিলাটি বলল, আমি ধৈর্যধারণ করব, তবে ঐ অবস্থায় আমার লজ্জাস্থান খুলে যায়। কাজেই আল্লাহর নিকট দুআ করুন, যেন আমার লজ্জাস্থান খুলে না যায়। রাসুল তাঁর জন্য দুআ করলেন।

মৃগী রোগের কারণ ও প্রকারভেদঃ

আমার বক্তব্য হচ্ছে, মৃগীর অবস্থা দু’রকমের হয়ে থাকে। এক. দুষ্টু আত্মার কারণে। দুই, খারাপ উপাদানের কারণে। দ্বিতীয় প্রকারের কারণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে চিকিৎসকগণ কথা বলেন। অবশ্য বড় বড় জ্ঞানী পণ্ডিতগণ দুষ্টু আত্মার কারণে মৃগী রোগ হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন, কিন্তু তার চিকিৎসার কোনো উপায় তাদের জানা নেই এবং তারা একথাও স্বীকার করেন যে, এর চিকিৎসা এমন উন্নত আত্মার দ্বারাই সম্ভব, যারা দুষ্টু আত্মার প্রতিরোধ করে এবং তাদের কাজের মুকাবিলা করে তাদের বিনষ্ট করে দেয়। বুকরাজ (হিপোক্রেটিস) তার কোনো কোনো গ্রন্থে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন এবং মৃগীর চিকিৎসা বিষয়ে লিখেছেন। তিনি লিখেছেন,এ চিকিৎসা কেবল এমন মৃগীর জন্য উপকারী, যা খারাপ উপাদানের কারণে সংগঠিত হয়। তবে যে মৃগী রোগ অশুভ আত্মার কারণে হয়, তাতে এ চিকিৎসা কার্যকর নয়।

মৃগী রোগের সৃষ্টিতে অশুভ আত্মার প্রভাবঃ

ক শ্রেণির অজ্ঞ, যোগ্যতাহীন ও নামধারী চিকিৎসক এবং নাস্তিকতায় বিশ্বাসীরা অশুভ আত্মাকে মৃগী রোগ সৃষ্টির কারণ মানতে অস্বীকার করে। তারা এ কথা বিশ্বাস করে না যে, এটিও রুগীর দেহে প্রভাব বিস্তার করে। তাদের কাছে অজ্ঞতা ছাড়া আর কোনো দলিল নেই। নতুবা আমরা দেখতেই পাচ্ছি, চিকিৎসাশাস্ত্রে এই রোগের চিকিৎসার ব্যাপারে কোনো কার্যকরী প্রতিষেধক পাওয়া যায় না। অনুভূতি ও অস্তিত্ব তার একমাত্র সাক্ষী। তারা এই মৃগী রোগের কারণ হিসাবে কতিপয় খারাপ উপাদানের প্রভাব দেখিয়েছে। কিন্তু মৃগী রোগের সকল প্রকারের ক্ষেত্রে তাদের এই দাবি সত্য প্রমাণিত নয় ।

মৃগী রোগেকে ‘ইলাহি রোগ’ নামকরণঃ

প্রবীণ চিকিৎসকগণ এ মৃগী রোগের নাম দিয়েছেন, ‘ইলাহি রোগ’। তারা বলেন, এটি আত্মাসমূহের কারিশমা। আর জালিনুস এবং অন্যান্যরা এ নামকরণের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, একে ‘ইলাহি রোগ’ বলার কারণ হলো, এ রোগ মাথায় সৃষ্টি হয়, আর মস্তিষ্ক একটি পবিত্র স্থান। একই স্থানে আল্লাহর অবস্থান। এ কারণে তাকে ‘ইলাহি রোগ’ বলা হয়। তাদের উপরোক্ত ব্যাখ্যার কারণ হলো, এ আত্মাগুলো ও তাদের বিধি-বিধান এবং তাদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতা রয়েছে। নাস্তিক চিকিৎসকরা কেবল খারাপ উপাদানজনিত কারণে সৃষ্ট মৃগী রোগকেই স্বীকার করে। মৃগী রোগের অন্যান্য প্রকারগুলো তারা অস্বীকার করে।পক্ষান্তরে যাদের এ আত্মাগুলো এবং এদের প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে জ্ঞান এবং জানাশোনা রয়েছে তারা এ সকল নাস্তিক চিকিৎসকদের অজ্ঞতা এবং তাদের জ্ঞানের দুর্বলতা দেখে উপহাসের হাসি হাসে।

মৃগী বা ইলাহি রোগের চিকিৎসা পদ্ধতিঃ

মৃগী রোগের চিকিৎসা দুটি উপায়ে হতে পারে।
১. রুগীর পক্ষ থেকে।
২. চিকিৎসকের পক্ষ থেকে।
রুগীর পক্ষ থেকে চিকিৎসার রূপ হলো, আক্রান্ত ব্যক্তি সেই আত্মা সৃষ্টিকারী মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিনের দিকে খাঁটি অন্তরে, পূর্ণ শক্তির সাথে মনোযোগ নিবদ্ধ রাখবেন এবং ইখলাসের সাথে ‘আউযুবিল্লাহ’ পড়ার অভ্যাস রাখবেন। যাতে অন্তর ও জবান উভয়টির সমন্বয় ঘটে। কেননা, এটি একটি লড়াইয়ের মতো। আর লড়াইয়ের ক্ষেত্রে দু’টি বিষয় ছাড়া শত্রু থেকে মুক্তিলাভ করা যায় না। প্রথমটি হলো, অস্ত্র উন্নত ও উত্তম প্রকারের হওয়া। দ্বিতীয়টি হলো, অস্ত্র চালনাকারী উপযুক্ত হওয়া।

প্লেগ রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন: প্লেগ রোগ কি ? ধর্মীয় ব্যাখ্যা এবং চিকিৎসা

দ্বিতীয়টি হলো, অস্ত্র চালনাকারী উপযুক্ত হওয়া। এ দু’টির একটিও যদি
যায়, তাহলে এ অস্ত্র দ্বারা উপকার পাওয়া যাবে না।
এবার একটু সেই অবস্থার কথা অনুমান করুন। যখন দুটোই অর্থাৎ অন্তরে একত্ববাদ বা তাওহিদ, তাওয়াক্কুল, তাকওয়া এবং উ আল্লাহর দিকে ঝুঁকে পড়া থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকবে এবং দুই আ প্রতিহত করার জন্য তার কাছে কোনো অস্ত্র থাকবে না, এমন ব্যক্তি লড়াই করবে?
আমি আমার শাইখকে দেখেছি তিনি মৃগী রুগীর নিকট এমন কাউরে পাঠাতেন, যে মৃগী রুগীর মাঝে আপতিত আত্মাকে সম্বোধন করবে আ বলবে, শাইখ তোমাকে বলেছেন, তুমি বের হয়ে যাও। কেননা এই লোৱ তোমার জন্য হালাল নয়। এ কথা শুনে মৃগী রুগী সুস্থ হয়ে যেত। আর কখনো কখনো শাইখ নিজেই তাকে সম্বোধন করতেন। কখনো কখনো আব অবাধ্য হতো তখন তিনি তাকে প্রহার করে বের করতেন। মৃগী রুগী সুস্থ হয়। যেত। সে ব্যখ্যা অনুভব করত না। আমি এবং অন্যান্যরা তার নিকট থেকে এটি অনেক বার প্রত্যক্ষ করেছি।
শাইখ রহ. অধিকাংশ সময় রুগ্ন ব্যক্তির কানে এই আয়াত পাঠ করতেন,
أَفَحَسِبْتُمْ أَنَّما خَلَقْنَاكُمْ عَبَثًا وَأَنَّكُمْ إِلَيْنَا لَا تُرْجَعُونَ

তোমরা কি মনে করেছিলে আমি তোমাদের অন তোমাদের কখনো আমার দিকে ফিরে আসতে হবে
আমাকে বলা হয়েছে, একবার এক রুগীর কানে এ আয়াত পাঠ করা হয়েছিল। তখন আত্মা বলতে লাগলো, হ্যা। পরে দীর্ঘ আওয়াজ বেরিয়ে এলো। শাইখ বলেন, আমি তখন লাঠি তুলে নিলাম এবং তার পাড়ে আমাত করলাম। এমনকি মারতে মারতে আমার হাত দুর্বল হয়ে গেল। দর্শকর ধারণা হলো, এমনভাবে প্রহার করার কারণে আক্রান্ত ব্যক্তি অবশেষে জীবন হারাবে। প্রহার করার মাঝে সে বলল, আমি তাকে ভালোবাসি। তিনি তাকে উত্তর দিলেন, সে তোমাকে ভালোবাসে না। সে বলতে লাগলো, আমি তার সাথে হজ করতে যেতে চাই। আমি বললাম, সে তোমার সাথে হজে যেতে চায় না। তারপর বলতে লাগলো, আচ্ছা আমি তোমার সম্মানের খাতিরে তাকে ছেড়ে যাচ্ছি । ঘটনার বর্ণনাকারী বলেন, তিনি বললেন, না বরং তুমি আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের আনুগত্যের খাতিরে রুগীকে ত্যাগ করো। অবশেষে সে বললো, আমি চলে যাচ্ছি। বর্ণনাকারী বলেন, রুগী বসে ডানে-বামে তাকাতে লাগলো এবং বললো, শাইখ কেন আগমন করেছেন? অন্য লোকেরা বলল, এই যে পিটানো হয়েছে। সে বললো, হযরত শাইখ আমাকে কী অপরাধে মেরেছেন? অথচ আমি তো কোনো অপরাধ করিনি। প্রকৃত পক্ষে সে বুঝতেও পারেনি যে, সে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে মৃগী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ‘আয়াতুল কুরসি” দ্বারা চিকিৎসা করতেন। রোগাক্রান্ত ব্যক্তিকেও তার উপর আমলের নির্দেশ দিতেন এবং পূর্ণ সুরাতুল ফালাক ও সুরাতুন নাস পড়ার কথা বলতেন।

দুষ্ট আত্মার চিকিৎসা এক মাত্র নির্বোধ ব্যক্তি অস্বীকার করেঃ

সারকথা মৃগী রুগীর উল্লেখিত চিকিৎসা শুধু তারাই অস্বীকার করতে পারে, যারা নির্বোধ ও নিরক্ষর। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দীনদারি না থাকার কারণে তাদের ওপর দুষ্ট আত্মারা প্ররোচনা জাগায়। আল্লাহর যিকির এবং নবির আলোচনা এবং মুখ ও অন্তর থেকে ইমানি নূর দূর হয়ে যাওয়ার কারণে হয়ে থাকে। কারণ ওই অবস্থায় অশুভ আত্মা দ্বারা এই শ্রেণির মানুষ এমনভাবে নির্যাতিত

হয়ে থাকে যে, সে অর্থশূন্য হয়ে যায়। কখনো কখনো সে উলঙ্গ হয়ে যায়। ফলে সে তার দ্বারা প্রভাবিত হয়। বাস্তবতার দিকে তাকালে আপনি দেখবেন, অধিকাংশ মনুষ্যাত্মার ওপর তাদের অশুভ আত্মার প্রভাবের কারণে মৃগী রোগ রক্ষা করা আর সম্ভব হয়ে উঠে না। এই রোগ তার মধ্যে চক্রাকারে ঘুরতে দেখা দেয়। এই অশুভ আত্মা তাকে ফাদে ফেলে যত্রতত্র নিয়ে যায়। তাকে থাকে। এটাকেই প্রকৃত মৃগী রোগ বলা হয়।

কে মৃগীরোগের চিকিৎসা করাবেন?

এই মৃগীরোগের চিকিৎসা এমন বিশুদ্ধ জ্ঞানী লোক দ্বারা সম্পন্ন করাতে হবে,
যিনি,
১. যিনি রাসুলগণ যা কিছু নিয়ে এসেছেন তার ওপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখেন। ২. জান্নাত-জাহান্নাম তার চোখের সামনে ও অন্তরের আয়নায় থাকবে। ৩. জগতবাসীর উপর আপতিত বিপদ-আপদ এবং তাদের ঘর-বাড়ি , আসবাব-পত্রের ওপর নেমে আসা বালা-মুসিবতসমূহ সম্পর্কে বৃষ্টির ফোটা বর্ষনের মতো খবর রাখবে। এই দুনিয়াবসীরা বিবেকহীন মৃত প্রায় । মৃগীরোগের মতো কঠিন কোনো রোগ নেই। যখন এ রোগ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে তখন একমাত্র মৃগীরোগীই এর অস্তিত্ব টের পায়। এসময় রুগীর প্রতি অধিক লক্ষ্য রাখা এবং তার প্রতি অধিক সতর্ক থাকার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয় না। তখন এই রোগকে কেউ ক্ষতিকর মনে করে না এবং রোগ হিসাবেও স্বীকার করে না। বরং এই পরিস্থিতিতে যারা ইতিপূর্বে মৃগীরোগকে গুরুত্ব দিয়ে এসেছেন এবং সতর্ক করেছেন অজ্ঞতাবসত লোকজন তাদের সমালোচনা করতে থাকে।

মৃগীরোগের রুগীরা বিভিন্ন স্তরের হয়ে থাকেঃ

আল্লাহ যখন কাউকে এই রোগ থেকে মুক্তি দিতে ইচ্ছা করেন এবং মুক্তি প্রদান তাঁর দৃষ্টিতে ব্যক্তির জন্য কল্যাণকর হয়, তখন তিনি আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিজ ইচ্ছায় এ রোগ থেকে মুক্তি প্রদান করেন । তার বিবেককে ফিরিয়ে দেন। পৃথিবীবাসী সবদিকেই মৃগীরোগী দেখতে পায়। তাদের ডানে-বামে, সামনে- পেছনে রয়েছে এই মৃগীরোগে আক্রান্ত মানুষ। তারা তাদের অবস্থাভেদে এই
রোগের রুগীকে চিহ্নিত করতে পারে।
এসব রুগীরা বিভিন্ন স্তরের বিভক্ত,
১. তাদের মাঝে কেউ আপদমস্তক পাগলামীতে নিমজ্জিত।
২. কেউ সামান্য সময়ের জন্য সুস্থ জীবনে ফিরে এসে পুণরায় পূর্বের পাগলামীতে ফিরে যায়।
৩. তাদের মাঝে কেউ একবার তুলনামূলক স্থায়ীভাবে সুস্থ হয়, আবার দীর্ঘ। সময়ের জন্য পাগল হয়। যখন সুস্থ হয়, তখন সুস্থ জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তির মতো কাজ-কর্ম করে। অতঃপর মৃগীরোগ ফিরে আসে। ফলে সে পূর্বের ন্যায়
দিকভ্রান্ত হয়ে যায়।

মৃগীরোগের ওপর একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যালোচনা

মৃগীরোগ কীভাবে সৃষ্টি হয়?

মানবদেহের মৌলিক চারটি উপাদান রয়েছে। এগুলো হলো, রক্ত, পিত্ত, কফ ও অম্ল। এই মৌলিক উপাদানের মিশ্রপ্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট ‘মৃগীরোগ’ এমন একটি ব্যাধি, যা শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গের স্বাভাবিক সঞ্চালন বা কর্মক্রিয়া এবং অনুভব অনুভূতির স্থিরতাকে অকেজো ও বিকারগ্রন্থ করে দেয়। তবে এ অকার্যকারিতাটা পরিপূর্ণভাবে হয় না। এমন নয় যে, রুগী পরিপূর্ণভাবে অনুভূতিহীন ও অকেজো হয়ে যায়; আবার এমনও নয় যে, অনুভূতির স্থিতি ও অঙ্গ-প্রতঙ্গের ক্রিয়াশীলতা পরিপূর্ণরূপে বাধাগ্রস্থ হয়। এ ব্যাধির উৎস মস্তিস্কের অভ্যন্তরের ছিদ্রের সরু পর্দায় দূষিত মিশ্রণের আঠালো পদার্থ থেকে সৃষ্টি হয়।
যার কারণে ইন্দ্রিয়শক্তিগুলোর অনুভূতি ও ক্রিয়াশীলতার প্রভাব অর্থাৎ দৈহিক অনুভূতি ও ক্রিয়াশীলতার এমন কোনো প্রভাব মস্তিস্কে ও অঙ্গ-প্রতঙ্গে পরিপূর্ণভাবে পাওয়া যায় না যে, তার মধ্যে ইন্দ্রিয়গুলোর ক্রিয়াহীন হওয়ার মতো কোনো ত্রুটি অনুভূত হয়। কখনো এ ব্যাধি ভারি বাতাসের কারণে হয়ে থাকে, যা দেহের স্বাভাবিক ক্রিয়া-কর্মকে বাধাগ্রস্থ করে। আবার কখনো এ ব্যাধি ধুলাবালির কারণে হয়ে থাকে, যা কোনো কোনো অঙ্গ- প্রতঙ্গের সাহায্যে মস্তিস্কের অভ্যন্তর ও তার ক্রিয়াস্থলের দিকে ধাবিত হয়। অথবা দূষিত উষ্ণ আবহাওয়া সৃষ্টি হওয়ার কারণে মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ থেকে তা অতিক্রম করে পেট ও মস্তিষ্কের দিকে ধাবিত হয়। অথবা এটি বের হওয়ার অন্যকোনো রাস্তা অনুসন্ধান করে। যার ফলে মানুষের শরীর ও সমস্ত অঙ্গ-প্রতঙ্গে সংকোচন সৃষ্টি হয়। সংকোচনের উদ্দেশ্য হলো, মস্তিষ্কের দিকে ধারিত ক্ষতিকর সকল জিনিসকে প্রতিহত করা। এ কারণে শরীরের সকল অংশে একরকম ঝ সৃষ্টি হয়। রুগীর জন্য স্থীর দাঁড়িয়ে থাকাও দে হয়ে পড়ে। এমনকি সে জমিনে পড়ে যায় ও তার মুখ থেকে ফেনা বের হে দেখা যায়।

এ কঠিন ও সূক্ষ্ম রোগ যে বয়সে বেশি ক্ষতিকরঃ

এই মৃগীরোগকে কঠিন ও সূক্ষ্ম রোগসমূহের মধ্যে গণ্য করা হয়। এ যে, এ ব্যাধি রুগীকে লম্বা একটি সময় পর্যন্ত দেহ ও মস্তিষ্কে কষ্ট ে থাকে। দীর্ঘ সময় পর্যন্ত বাকি থাকে ও মৃত্যু অবধি এর পুনরাবৃত্তি হতে পারে। ওষুধপথ্যের কার্যকারিতা ও সুস্থতায় স্থিরতা না পাওয়ার কারণে এবং পুরোনো রোগ হিসেবে গণ্য করা হয়।বিশেষত পঁচিশোর্ধ বয়সে যদি এ ব্যাধি কখনো মস্তিস্কে বা মস্তিষ্কমূলে অনুভূত হয়, তাহলে এমন লোকদের আজীবন মৃগী রোগ থেকে যায়। প্রখ্যাত। চিকিৎসাবিদ বুকরাত লিখেন, এ ধরণের লোকদের মৃগী রোগ মৃত্যু পর্যন্ত হাঁ
থাকে।

মৃগীরোগে আক্রান্ত নারীকে বিশেষ নির্দেশনাঃ

যখন উল্লেখিত ব্যাধির সূক্ষ্মতত্ত্ব জানা গেলো, তখন হাদিসে আলোচিত নারী যে মৃগী রোগে আক্রান্ত ছিল এবং তার ইন্দ্রিয়শক্তিগুলোর অস্থিতিশীলতার কারণে মাঝে মাঝে শরয়ি পর্দা খুলে যাওয়ারও উপক্রম হতো। হয়ত তা রোগটি উল্লেখিত রোগের পর্যায়ের ছিল। যার কারণে রাসুল এ স্বতন্ত্রতা এ রোগে আক্রান্ত হওয়া ও এর উপর ধৈর্যধারণ করার ভিত্তিতে জন্মালে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি দুআ করেছেন, যেন অন্যদের সম্মুখে শরধি খুলে না যায়। অর্থাৎ রোগ পুনরাবৃত্তির সময় যেন তার কাপড় ঠিক থাকে এবং তার ধৈর্যধারনের বিনিময়ে জান্নাত লাভ এবং সুস্থতার দুআ’ এ দু’টি থেকে বে শর্ত ছাড়াই | কোনো একটি গ্রহণ করার পরামর্শ দেন। মহিলাটি কোনো ধৈর্যধারনের বিনিময়ে জান্নাত গ্রহণ করায় রাসুলে কারিম পুনর্বার জন্য দুআ করেন।

চিকিৎসা পরিত্যাগ করতে মৌন সমর্থন প্রদানঃ

এই হাদিস দ্বারা চিকিৎসা বাদ দেওয়া ও ওষুধ ব্যবহার না করার বৈধতা পাওয়া যায়।’ দুআ ও আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশ করার মধ্যে রুপীর আত্মিক যে চাঞ্চল্য ও প্রতিক্রিয়া অনুভূত হয়, তা চিকিৎসকের চিকিৎসা দ্বারা কখনো সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে দৈহিক চিকিৎসাপত্রের প্রভাব ও ক্রিয়াশীলতার তুলনায় দুআ ও আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশ হওয়ার প্রভাব অধিকতর উপকারী ।
এ অভিজ্ঞতা আমি নিজেও উপলব্ধি করেছি এবং অন্যান্য অভিজ্ঞ চিকিৎসকগণ বার বার উপলব্ধি করেছেন যে, মানসিক শক্তির প্রভাব রুগীর রোগমুক্তির ক্ষেত্রে আশ্চর্যজনক প্রভাব ফেলে থাকে। চিকিৎসাশাস্ত্রে এই বাস্তবতা অস্বীকারকারী নির্বোধ গোয়ারদের চেয়েও অধিক ক্ষতিকর।
আর এটিও প্রকাশ্য বিষয় যে, হাদিসে বর্ণিত ঐ মহিলার রোগ এ প্রকারের সাথে সম্পর্কীত ছিল। এই সম্ভাবনাও রয়েছে যে, তার রোগের সম্পর্ক মানসিক দুর্বলতার সাথে ছিল। রাসুলে কারিম তাকে ধৈর্যধারণ করে জান্নাত লাভ এবং সুস্থতার দুআ করা দু’টির মধ্য থেকে একটিকে বেছে নেওয়ার এখতিয়ার দিয়েছিলেন। তখন সে-মহিলা ধৈর্যধারণ করে জান্নাত লাভ করার বিষয়টি এখতিয়ার করেছিল। তবে সাথে সাথে এ দুআ করিয়ে নিয়েছিলেন যে, এই রোগ দেখা দেওয়ার সময় তার শরয়ি পর্দার ব্যাঘাত যেন না ঘটে ।

আরো পড়ুন:

Please Share This Post in Your Social Media